শ্রমিক সংকটে মালয়েশিয়া: পামঅয়েল উৎপাদন ব্যাহত

|

মালয়েশিয়া প্রতিনিধি:

মালয়েশিয়ায় পামঅয়েল শিল্পের ভরা মৌসুম এখন। এ খাতে মারাত্মক শ্রমিক সংকট থাকায় বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে। প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়।

শ্রমিক সংকট উত্তরণে বাগানের বাইরে টানানো হয়েছে নিয়োগ বিজ্ঞাপন। এতে শ্রমিকদের বিনামূল্যে আবাসন, খাবার পানি সরবরাহের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো এস্টেটে তো ট্রাক্টর চালানো থেকে সব রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগের চেষ্টা চললেও এক্ষেত্রে আশানুরুপ সাড়া না পাওয়ায় কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ান নাগরিক যারা বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছে তাদেরকে এই খাতে কাজে লাগানোর প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে।

চলমান করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কা থেকে কর্মী এসে কাজে যোগ দিতে পারছে না। ফলে পামঅয়েল উৎপাদন ও ফল সংগ্রহ করা ব্যাপকহারে ব্যাহত হচ্ছে।

বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ পামঅয়েল উৎপাদনকারী দেশ হলো মালয়েশিয়া। সেখানে বর্তমানে কমপক্ষে ৩৭ হাজার শ্রমিকের সংকট রয়েছে। মোট যে পরিমাণ শ্রমিকের প্রয়োজন এই সংখ্যা তার শতকরা প্রায় ১০ ভাগ। মালয়েশিয়ান পামঅয়েল এসোসিয়েশন (এমপিওএ) মনে করছে, সীমান্ত খুলে দেয়া হলে এসব শ্রমিক আবার ফিরে আসবে। কিন্তু সরকার সকল সীমান্ত বন্ধ রেখেছে।

এদিকে সীম ডারবির এস্টেট ম্যানেজার ইমরান বলেন, প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ানদের নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমবারেই আমরা করোনাভাইরাস সংকটের মুখোমুখি। এ সংক্রান্ত শিল্পে এখন আশঙ্কা, এবার পামঅয়েল উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, যে ফল থেকে পামঅয়েল তৈরি করা হয়, তা নষ্ট হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।

এর ফলে উৎপাদন বা ফল সংগ্রহ বিলম্বিত হলে বড় আঘাত লাগতে পারে উৎপাদনে। এর ফলে পামঅয়েল উৎপাদনে মালয়েশিয়ার বড় প্রতিদ্ধন্ধী ইন্দোনেশিয়া সুবিধা পাবে। কারণ, সেখানে শ্রমিকের কোনো সংকট নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে, মালয়েশিয়ায় টন প্রতি পামঅয়েল উৎপাদন খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দাম ৪০৬ ডলার থেকে ৪৮০ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইন্দোনেশিয়ায় এই দাম টন প্রতি ৪০০ ডলার থেকে ৪৫০ ডলার। সিমে ডারবি, আইওআই করপোরেশন ও ইউনাইটেড প্লান্টেশনসের মতো পামওয়েল উৎপাদনকারী কোম্পানিতে কাজ করার জন্য শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ শ্রমিক সরবরাহ দিয়ে থাকে ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশ।

এই খাতে মালয়েশিয়ানদের নিয়োগ দেয়ায় তাদের রিক্রুটমেন্ট ফি ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক ফি রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু এই খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তারা এ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন পামওয়েল খাতে যে কষ্টকর কাজ তা অনেকটা নোংরা ও বিপজ্জনক। ফলে মালয়েশিয়ানরা এসব কাজ করতে চায় না। কারণ, তারা একে খুব কঠিন কাজ বলে মনে করেন।

এমপিওএ’র প্রধান নির্বাহী নাগিব ওয়াহাব বলেছেন, যদি স্থানীয়দের নিয়োগ করা যায় তাহলে হয়তো উৎপাদন খরচ কমে আসবে। কিন্তু তারা কি এসব কাজ অভিবাসী শ্রমিকদের মতো করতে পারবেন কি-না তা নিয়ে বড় এক প্রশ্ন রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে মালয়েশিয়ার বিশাল পামঅয়েল শিল্পে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বসেছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply