আজ নায়ক জাফর ইকবালের জন্মদিন

|

আজ বাংলাদেশি নায়ক জাফর ইকবালের জন্মদিন। ১৯৫০ সালের এই দিনে তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। জাফর ইকবালের বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ও ছোট বোন শাহনাজ রহমতুল্লাহ দুজনেই সংগীতশিল্পী।

জাফর ইকবাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি একজন সংগীত শিল্পীও। ১৯৬৬ সালে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে গঠন করেন ব্যান্ড গ্রুপ ‘রোলিং স্টোন’ এবং তার সিনেমায় প্রথম প্লে-ব্যাক করা গান ছিল তার ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে নায়করাজ রাজ্জাক অভিনীত ‘বদনাম’ ছবিতে প্রথম গান করেন ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও/আমি তো এখন আর নই কারও’। জাফর ইকবাল এর কণ্ঠে “হয় যদি বদনাম হোক আরো ” গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় প্রথম প্লেব্যাকেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান এই অভিনেতা। এরপর সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করিয়েছিলেন। তার জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারও ঘরনি’, ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’ অন্যতম। নিজের কণ্ঠে ‘কেন তুমি কাঁদালে’ শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেন আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের যুগে ‘সুখে থাকো নন্দিনী’ গানটি গেয়ে দারুণ সাড়া ফেলেছিলেন। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর উদযাপন বিশেষ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন ‘এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে’ গানটি।

বাংলা চলচ্চিত্রের স্টাইলিশ নায়কদের অন্যতম জাফর ইকবাল । তিনি চিরসবুজ নায়ক হিসেবে পরিচিত। শহুরে রোমান্টিক ও রাগী তরুণের ভূমিকায় দারুণ মানালেও সব ধরনের চরিত্রে ছিল তার স্বাচ্ছদ্য বিচরণ। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম আপন পর। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন কবরী। জাফর ইকবালের সাথে অভিনেত্রী ববিতা জুটি হয়ে প্রায় ৩০টির মত ছবি করেন। সবমিলিয়ে তিনি প্রায় ১৫০টি ছবি করেন।

১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় তাকে সে প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়। ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রে এক গ্রামীণ তরুণের চরিত্রেও দর্শক তাকে গ্রহণ করে।

জাফর ইকবাল ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতার বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ববিতার সঙ্গে তার জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশ হয়েই জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। জাফর ইকবাল অভিনীত ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘অপমান’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’ ,‘সন্ধি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র সুপারহিট হয়।

নায়ক জাফর ইকবাল সনিয়া নামে একজনকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান রয়েছে।

পারিবারিক অশান্তির কারণে জাফর ইকবাল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। পরবর্তীকালে মদ্য পানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ফলে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ৮ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply