বিয়ে বাড়িতে গিয়ে ১৫ বছর পর মাকে খুঁজে পেল সন্তান

|

নিজস্ব প্রতিনিধি :

বর-কনে নিয়ে বিয়ে বাড়িতে চলছে আনন্দ উৎসব। চলছে শিশুদের দৌড়-ঝাঁপ, কোলাহল। আত্মীয়তার সুবাদে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসলেও হারিয়ে যাওয়া মায়ের স্মৃতি মন থেকে থেকে মুছে যায়নি প্রিয় সন্তানদের। তাই সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে এসেও আশপাশের বাজারে একটু খুঁজে দেখা। হারিয়ে যাওয়া মায়ের যদি দেখা পাওয়া যায়। এরমধ্যেই সন্তান পাশের চাঁদনীমুখা বাজারে যেয়ে লোকমুখে শুনতে পান গত দুই বছর ধরে বাজারে এক মহিলা পাগল থাকে। বাজারের মানুষ যা ভিক্ষা দেয় তা দিয়েই চলে তার দিন।

এমন পাগল মাকে গত ১৫ বছর ধরে তো খুঁজে ফিরছে প্রিয় সন্তানেরা। আর দেরি না করে সন্তানরা ছুটে গিয়ে ঠিকই খুঁজে পেল হারিয়ে যাওয়া পাগল মাকে। সন্তান কাছে যেতেই পরিচয় দেয়ার দরকার হলো না। প্রিয় সন্তানের মুখ দেখেই চোখ দিয়ে বৃষ্টির ফোটার মতো গড়িয়ে পড়লো পানি। স্নেহমাখা হাতে সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে নাম ধরে ডাকল বাজারে থাকা পরহেজগার পাগল মা। ১৫ বছর পর হারিয়ে যাওয়া মাকে খুঁজে পেয়ে সন্তানও হাও মাও করে কেঁদে উঠল।

বাগেরহাট জেলার মংলা থানার জিরোধারাবাজি এলাকার ঘরখোল গ্রামের আলামিন জানান, তারা চার ভাই ও দুই বোন। তাদের মা গত ১৫ বছর আগে ব্রেনের সমস্যা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সব কিছু মনে রাখতে পারেন না। বৃষ্টির এক রাতে তাদের মা আবেদা বেগম (৬৯) বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এলাকায় মাইকিং, থানায় জিডি, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ বহু স্থানে মাকে খোঁজা হয়। কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্বাস ছিলো মা মরেননি; তিনি বেঁচে আছেন। তাই কোথাও গেলে সব কাজের ফাঁকে মাকে একটু খুঁজে দেখাটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছিলো।

আলামিন আরও বলেন, শুক্রবার দুপুরে সে তার প্রতিবেশীর সাথে এক আত্মীয়ের বিয়েতে গাবুরায় আসেন। সেখানে জানাতে পারে গত দুই বছর ধরে বাজারে এক পাগলী থাকে। তার ঠিাকানা কেউ জানে না। বিষয়টি শুনেই বিকেলে বিয়ের বাড়ির কোলাহল ছেড়ে তিনি বাজারে যান। বাজারে খোঁজার পর গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি দোকান ঘরের চালের নিচে বসে থাকা অবস্থায় ১৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে শনাক্ত করেন।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, পথ ভুলে এলাকায় আসা পাগলকে তার সন্তানেরা খুঁজে পেয়েছে। সন্তানদের কাছে পেয়ে মাও যেমন খুশি তেমনি গাবুরাবাসিও খুশি। প্রিয় সন্তানের সাথে মাকে তার নিজ ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply