হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উৎকট দুর্গন্ধে মলিন

|

ঢাকার দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলের পানিতে এখন উৎকট দুর্গন্ধ। চলতি মৌসুমে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ার পর থেকে হাতিরঝিলের পানিতে দুর্গন্ধ বাড়ছে। এ কারণে ভ্রমণপিপাসু নগরবাসী হাতিরঝিলে এলেও দুর্গন্ধের কারণে বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না।

জানা গেছে, ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হাতিরঝিল প্রকল্পে ভ্রমণ-উৎসব ম্লান করে দিচ্ছে উৎকট ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর থেকে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হতে হয় রাজউককে। এ গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে গত বছর ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে হাতিরঝিলের পানি শোধন প্রকল্প গ্রহণ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। এরই মধ্যে এক বছর অতিবাহিত হলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। প্রকল্পটি আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা। হাতিরঝিলের পানি শোধনের জন্য গৃহীত নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে পানি দুর্গন্ধমুক্ত হবে, না এ টাকাও জ্বলে যাবে- সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকা ঘুরে কথা হয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাতিরঝিল হয়ে অফিসে যাতায়াত করতাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পানির উৎকট দুর্গন্ধের কারণে এ রুট বাদ দিয়েছি। হাতিরঝিলসংলগ্ন মহানগর প্রকল্পের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই প্রশংসিত উদ্যোগ ছিল হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। কিন্তু প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে হাতিরঝিলের পানিতে উৎকট দুর্গন্ধের কারণে হাঁটাচলা বা বসারও উপায় থাকে না।

এ প্রসঙ্গে নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, হাতিরঝিলের সৃষ্টি বৃষ্টির পানি ধারণ করার জন্য। কিন্তু সেখানে ওয়াসার ড্রেনের মাধ্যমে স্যুয়ারেজের বর্জ্য ঢুকছে। সে কারণে হাতিরঝিলের পানি দুর্গন্ধযুক্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে রাজউক নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে বলে শুনেছি। এতেও যদি বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে এ বিষয়ে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েট এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে। একই বিষয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প শুরুতে একটি ড্রেনেজ উন্নয়ন প্রকল্প ছিল। পরে পাবলিক স্পেস করা হয়েছে।

তবে হাতিরঝিলে স্যুয়ারেজ বা শিল্পবর্জ্যরে সংযোগ বন্ধে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার ছিল, সেগুলো করা হয়নি। এ কারণে বিপুল অর্থ খরচ করে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তার সুফল মিলছে না। তিনি বলেন, এখন হাতিরঝিলের পানিকে দুর্গন্ধমুক্ত করতে হলে স্যুয়ারেজ ও পয়ঃবর্জ্য সংযোগ বন্ধে রাজউক বা অন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, হাতিরঝিলে সরাসরি ওয়াসার কোনো পয়ঃসংযোগ আছে বলে আমার জানা নেই। যদি এমন কিছু থাকে, তাহলে হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষ সেটা বন্ধ করে দিক।

তবে তিনি বলেন, বর্ষার মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে হাতিরঝিলের পানি নিষ্কাশন গেটগুলো খুলে দেয়া হয়, তখন কিছু ময়লা মিশ্রিত পানি হাতিরঝিলে ঢুকে। আমার জানামতে, রাজউক হাতিরঝিলের দুর্গন্ধযুক্ত পানি বন্ধ করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

এ বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও হাতিরঝিল প্রকল্পের পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্পের পানি শোধন করতে দুই বছর মেয়াদি ৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply