সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ময়লা দিয়ে তৈরি হবে জ্বালানী কয়লা

|

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ময়লা দিয়ে তৈরি হবে জ্বালানী কয়লা। সলিড রিকভার্ড ফুয়েল উৎপাদনের মাধ্যমে পৌরবর্জ্যের পরিবেশবান্ধব অপসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে পৌরসভার দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্য আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি এবং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে নিষ্কাশন ব্যবস্থা গ্রহণে ইউকে ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্কলার্স পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানির এবং পৌরসভার সাথে চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে উৎপাদিত বর্জ্য থেকে তৈরি হবে জ্বালানী কয়লা এবং উৎপাদন হবে বিদ্যুৎ। ফিরে আসবে শহরের পরিবেশ।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ মেট্রিকটন বর্জ্য ফেলা হয় বনবাড়ীয়া উন্মুক্ত স্থানে। প্রথমে এখানে একটি বায়োপ্লান করার কথা ছিলো। এর কিছুদিন পর যমুনা জৈব সার কারখানার নামে একটি সাইন বোর্ড দেখা যায়। এখন সেটিও নেই, কারণ দুটি প্রকল্পই ভেস্তে চলে গেছে।

আর এই উন্মুক্ত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ও পথচারীরা। আশপাশের বাড়ি ঘরের মানুষ বসবাস করতে পারছে না এই বর্জ্যরে গন্ধে। নানা রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। এ বর্জ্যরে গন্ধে নিজ ঘরবাড়ি ছেরে অন্যত্র ভারা বাড়িতে থাকছে অনেকে।

স্থানীয় আব্দুল হাকিম, সেলিনা খাতুন, হারেজ আলী জানায়, গত কয়েক বছর যাবত এই বর্জ্যের গন্ধে আমরা কেউ এই অঞ্চলে থাকতে পারি না। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি আমরা। গন্ধে খাওয়া দাওয়া করতে পারি না। নিজ বাড়ি রেখে অন্যত্র ঘর ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এই গন্ধ থেকে আমরা মুক্তি চাই।

এই বর্জ্যের দুর্গন্ধ থেকে স্থানীয়দের মুক্ত করতে গত ১৫ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও স্কলার্স পাওয়ার লিমিটেডের কারিগরি পরিচালকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৌর এলাকার সকল বর্জ্য পরিবেশ বান্ধব উপায়ে বিমুক্তকরণ করা হবে এবং এখান হতে সলিত রিকভার্ড ফুয়েল নামক এক প্রকার জ্বালানী কয়লা উৎপন্ন হবে এবং এই কয়লা দিয়ে উৎপাদন হবে বিদ্যুৎ। অন্যদিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সবুজ শহরে পরিণত হবে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা।

পৌরবাসী এম এম কামরুল হাসান, আসলাম আলী, তরিকুল ইসলাম বলেন, ১৫০ বছরের সিরাজগঞ্জ পৌরসভা হলেও পরিবেশের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রাস্তা ঘাটে ময়লার স্তূপ, ধুলা বালিতে ভরপুর থাকায় শহরের ভিতরে চলাচল করা সম্ভব হয় না। তাই সলিড রিকভার্ড ফুয়েল উৎপাদনের মাধ্যমে পৌরবর্জ্যের পরিবেশবান্ধব অপসারণ হলে পৌরসভার পরিবেশ অনেক সুন্দর হবে। একটি সুন্দর চকচকে পৌর শহর দেখতে চাই আমরা।

স্কলার্স পাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ দীন ইসলাম জানান, উক্ত প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের কোনো বিনিয়োগ, ব্যয় বা ভর্তুকি ছাড়া সম্পূর্ণভাবে স্কলার্স পাওয়ার লিমিটেড বিনিয়োগ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনাতে পৌরবর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করে নবায়নযোগ্য জ্বালানী উৎপাদন করবে, যার মাধ্যমে আপনারা একটি নির্মল, সবুজ এবং পরিচ্ছন্ন সিরাজগঞ্জ পাবেন।

পৌরসভার প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন জানান, এই প্রকল্পটি সময় উপযোগী। এতো পুরাতন পৌরসভা হলেও এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। কারণ যমুনা নদীর ভাঙ্গনকৃত ও যমুনা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় ধুলাবালি ও অপরিচ্ছন্ন থাকে সব সময়। যদিও আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা প্রতিনিয়ত কাজ করছে শহর পরিষ্কার রাখার জন্য। তার পরেও সবগুলো রাস্তা ও সব নাগরিকের বর্জ্য পরিষ্কার হয় না। তাই আমি মনে করি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিরাজগঞ্জ পৌরসভাটি বাংলাদেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য সম্মত, বায়ু দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মুক্ত শহর হিসেবে পরিণত হবে।

সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়র সৈয়দ আব্দুর রউফ মুক্তা জানান, সিরাজগঞ্জ শহরের বর্জ্য আমাদের শহরের প্রবেশদ্বার কনবাড়ীয়াতে ফেলা হয়। এই বর্জ্যের গন্ধে অতিষ্ঠ ওই অঞ্চলের মানুষ। তাই আমাদের এমপি মহোদয়ের সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যে গিয়ে এই প্রকল্প সম্পর্কে ধারণা নিয়ে আসি। এরপর স্কলার্স পাওয়ার লিমিটেডের সাথে কথা বলে চুক্তি স্বাক্ষর করি। আগামী সাত মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পৌর
এলাকার বর্জ্য অপসারণ হবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আধুনিক শহরে পরিণত হবে। আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা হবে।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না বলেন, আপনারা জানেন সারা পৃথিবী পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। আর এই পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের অবশ্যই পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আর এই পরিবেশ বান্ধব কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা ও স্কলার্স পাওয়ার লিমিটেডের মধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে শহরের সকল বর্জ্য দিয়ে সলিড রিকভার্ড ফুয়েল উৎপাদনের মাধ্যমে পৌরবর্জ্যের পরিবেশবান্ধব অপসারণ যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা দ্রুতগতিতে কাজ হস্তান্তর ও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের মধ্যে একটি মাইলফলক হবে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আগামীকাল ২ নভেম্বর সোমবার বিকেলে প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন ও প্রকল্প পরিচিতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply