প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক প্রোবোনো অ্যাওয়ার্ড পেলেন আইনজীবী ইশরাত হাসান

|

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের খ্যাতিমান আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মৗ ইশরাত হাসান আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক প্রদত্ত আইবিএ প্রোবোনো এওয়ার্ড, ২০২০ পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের কনফারেন্সে এই ঘোষণা দেয়া হয়।

সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় লন্ডনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের কনফারেন্সে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের জনগণের বিশেষ করে দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যয়বিচার প্রাপ্তির পথে বাধা দূরীকরণ এবং নারী ও শিশুর আইনী অধিকার রক্ষার জন্য অসামান্য অবদানের জন্য আইনজীবী ইশরাত হাসানকে এই পুরস্কার দেয়া হয়।

আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জনস্বার্থে আইনজীবী ইশরাত হাসানের অসংখ্য কাজের মধ্যে আলোচিত হলো তার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে রেলস্টেশন, বাস স্টেশন, শপিং মল, আদালতসমূহ এবং সকল অফিসসহ জনবহুল স্থানে ব্রেস্টফিডিং রুম এবং শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আদালত রুল জারি করেন। ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশের কিছু কিছু কর্মস্থলে কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিভাবান আইনজীবী ইশরাত হাসান এই রিটে তার ৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর-বিন-সাদীকে পিটিশনার করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হোরাসিও বার্নাডে নেটো বলেন, জন্মের আগেই গর্ভের শিশুর লিঙ্গ চিহ্নিতকরণের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য আবেদন করে মিসেস হাসান মা ও তাদের গর্ভের শিশুর অধিকার রক্ষার লড়াই করেছেন। তাঁর যুক্তি ছিল, লিঙ্গ চিহ্নিতকরণের পরীক্ষার ফলে গর্ভের শিশুর সংবিধান স্বীকৃত বেঁচে থাকার অধিকার, সমতার অধিকার এবং আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার খর্ব হয়। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ছেলে সন্তান প্রত্যাশা করা হয়। কোনো মা যখন দেখেন তার গর্ভের শিশুটি মেয়ে সন্তান তখন তিনি মানসিক চাপে পড়েন যা গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আরও গুরুতর হলো, কোনো কোনো পরিবারে গর্ভবতীকে মানসিক চাপ দেয়া হয় গর্ভপাত করানোর জন্য। আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে অনেকগুলো ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার গর্ভের শিশুর লিঙ্গ চিহ্নিতকরণ বন্ধ করে দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সন্তানের বৈধতা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইন চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী ইশরাতের দায়ের করা রিট এবং গণপিটুনিতে নিহত এক মায়ের অনাথ হওয়া সন্তানদের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে দায়ের করা রিটের বিষয় গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে অনুভুতি জানতে চাওয়া হলে, আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ভাবতে খুবই ভালো লাগছে বিশ্বের এতগুলো দেশের আইনজীবীদের মধ্যে আমাকে পুরস্কৃত করা হলো। এটা নিঃসন্দেহে আমার জন্য, আমার দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। এই পুরস্কার আমার একার না, আমাদের দেশের সকল নারী ও শিশুর জন্য এই পুরস্কার। আরও ভালো লাগছে, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আমি এই পুরস্কার পাচ্ছি। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ করে নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় কাজ করতে আমাকে আরও উৎসাহ যোগাবে।

উল্লেখ্য, সারা বিশ্বের ৮০ হাজার আইনজীবী এবং ১৯০টি বার অ্যাসোসিয়েশন এবং ল’সোসাইটি আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদর দপ্তর লন্ডনে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , দক্ষিণ কোরিয়া এবং ব্রাজিলে এর আঞ্চলিক অফিস রয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply