আদালতের রায় জাল করে সম্পত্তি দখলের অভিযোগ পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে

|

ভৈরব প্রতিনিধি:

আদালতের রায় জাল করে ভৈরব ভূমি অফিসে খারিজ করার পর সম্পত্তি দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে পৌর কাউন্সিলর সোহাগ মিয়ার বিরুদ্ধে।

এমনই এক চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে ভৈরব পৌর এলাকার চন্ডিবের মৌজাতে। সম্পত্তির মালিক হাজী হেলু মিয়া সম্প্রতি ভৈরব ভূমি অফিসে তার বাবার সম্পত্তি খারিজ করতে গেলে এই জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়ে। আদালতের রায় ও জেলা প্রশাসকের অফিসের সিল, অন্যান্য জাল কাগজপত্র যমুনা নিউজের হাতে এসেছে।

পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সোহাগ মিয়া কিশোরগন্জের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল আদালতের জাল মোকাদ্দমা নং ৮১৪/২০১৩ দেখিয়ে তার বাবা হাজী মো. আবুল কাশেমের নামে ৭ শতক ভূমি খারিজ করে নেন। সম্পত্তির মালিক তার সম্পত্তি খারিজ করতে গিয়ে জানতে পারেন আদালতের ৮১৪/২০১৩ মোকাদ্দমাটি করেছিল কিশোরগন্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার চানপুর গ্রামের রমাকান্তের ছেলে রসময় চক্রবর্তী।

এই মামলাটির রায় জালিয়াতি করে কাউন্সিলর সোহাগ মিয়ার তার পিতা আবুল কাশেমের অনুকূলে রায় পেয়েছে বলে কিশোরগন্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখায় গত ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন।

আবেদনের পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আবুল কাশেমের নামে ৭ শতাংশ ভূমি নামজারি করতে নির্দেশ দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পত্র ও আদালতের রায়ের কপি পেয়ে ২০১৯ সালের ২৯মে ভৈরব ভূমি অফিস তাদের ৭ শতাংশ আবুল কাশেমের নামে নামজারি করে দেয়।

কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের পাঠানো পত্র রায়ের কপি ও অফিসের সিল সবকিছুই ভূয়া মিথ্যা ও জাল। বাদি হাজী মো. হেলু মিয়ার অভিযোগ, এলাকার ৭ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সোহাগ মিয়া জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক অফিসের সিল, পত্র ও আদালতের রায় সবকিছুই জালিয়াতি করেছেন।

হেলু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সোহাগ মিয়া ভূমিটি তার বাবার নামে নামজারি করলেও প্রতারণার মূল হোতা এই কাউন্সিলর। ভূমি খারিজ করার পর তিনি আমার সম্পত্তি দখল করে রেখেছেন। বিভিন্ন লোক দিয়ে তার সাথে আপোষ করতে বার বার প্রস্তাব দিচ্ছে এই কাউন্সিলর।

এই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক ছিল কমলপুর এলাকার চাঁন মিয়া। পরে চন্ডিবের এলাকার হাজী হেলু মিয়ার বাবা আ. রাজ্জাক ক্রয়সূত্রে ১৩ শতক ভূমির মালিক হন তিনি। ভূমিটি দীর্ঘদিন খারিজ ছিল না। আ. রাজ্জাকের মৃত্যুর পর তার ছেলে হাজি হেলু মিয়া ভূমিটি খারিজ করতে গিয়ে দেখেন ৭ শতাংশ ভূমি প্রতারণা করে তারা খারিজ করে নিয়েছে। মাঠ পরচাতে পুরাতন মালিক চাঁন মিয়ার নাম থাকায় তার ছেলে আলী হোসেন ভৈরব ভূমি অফিসে মিসকেস করে খারিজটি বাতিল করতে গত অক্টোবর মাসে আবেদন করেছেন।

এদিকে জালিয়াতির ঘটনাটি উদঘাটিত হওয়াই কাউন্সিলর সোহাগের বাবা আবুল কাশেম গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিজেই ভূমি অফিসে আবেদন করে খারিজটি বাতিল করতে অনুরোধ করেন। বাদি আইনগত ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে শোনার পর মামলা থেকে বাঁচতে তিনি নিজেই এই আবেদনটি করেন বলে হেলু মিয়ার অভিযোগ।

কাউন্সিলর সোহাগ মিয়া বলেন, কিশোরগন্জের একজন অ্যাডভোকেট মামলার রায়ের কপিটি আমাকে দিয়েছেন। জালিয়াতি করলে তিনি করেছেন। তিনি বলেন খারিজটি বাতিল করতে আমার বাবা ভূমি অফিসে আবেদন করেছেন।

ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিমাদ্রি খিসা জানান, ঘটনাটি আমি অবহিত হওয়ার পর কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসক অফিসে পত্র দিয়েছি। পত্রের উত্তর পাওয়ার পর জালিয়াতির প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply