ফুটবল ঈশ্বর যা দিয়ে গেলেন

|

১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপা। সেই শিরোপা জয়ের নায়ক ছিলেন একজনই। তিনি ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ৯০’এ পরের আসরে দলকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও ধরে রাখতে পারেননি শিরোপা। এরপরের বিশ্বকাপে ড্রাগ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বিতর্ক মাথায় নিয়েই শেষ হয় ম্যারাডোনার আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ার। মাঠ আর মাঠের বাইরে নানা ঘটনায় বর্ণিল আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের ক্যারিয়ার।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পুরো ইংল্যান্ড দলকে নাস্তানাবুদ করে গোল দেন ম্যারাডোনা। তারপর থেকেই ম্যারাডোনা আর এই গোল হয়ে পড়ে সমার্থক। সেকারণেই হয়ত কিংবদন্তির এই সৃষ্টিকে বিশ্বকাপের সেরা গোলের স্বীকৃতি দিতে বেগ পেতে হয়নি ফিফাকে। ৮৬’র এই বিশ্বকাপেই ২৫ বছর বয়সি ম্যারাডোনার একক নৈপূন্যে আর্জেন্টিনা জিতেছিল বিশ্বকাপ শিরোপাটি।

যদিও ম্যারাডোনার প্রথম বিশ্বকাপ ছিল ১৯৮২ তে স্পেনের আসর। সেই আসরে ২১ বছররের তরুণ ম্যারাডোনা নিজের প্রতিভার ঝলক দেখাতে পারেনি। প্রথম রাউন্ডে হাঙ্গেরির বিপক্ষে দুই গোল করলেও তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে ইতালি ও ব্রাজিলের বিপক্ষে খুঁজে পাওয়া যায়নি ম্যারাডোনাকে। তবে ব্রাজিলের ফুটবলারকে লাথি মারা শাস্তি হিসেবে পাওয়া লাল কার্ডেই শেষ হয় তার ও আর্জেন্টিনার সেবারের বিশ্বকাপ মিশন।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে ১৯৯০ এর ইতালির বিশ্বকাপে ছিলেন ম্যারাডোনা। কিন্তু ইনজুরিতে অনেকটাই গতিহীন ছিলেন তিনি। তাই ভূমিকা বদলে পুরো আসর জুড়ে খেলেছেন প্লে মেকার হিসেবে। টানা দ্বিতীয় ফাইনালে পৌঁছালেও পুরনো শত্রু পশ্চিম জার্মানির কাছে হার মানে আর্জেন্টিনা।

ম্যারাডোনার শেষ বিশ্বকাপ ১৯৯৪ সালে। যে আসরে মাত্র দুই ম্যাচ খেলেন এই ফুটবল ঈশ্বর। গ্রীসের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক গোলও ছিল তার। কিন্তু আসরের মাঝপথে ড্রাগ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লে দেশে ফেরত পাঠানো হয় ম্যারাডোনাকে।

ক্লাব ক্যারিয়ারটাও বর্ণিল ছিলো ম্যারাডোনার। ১৯৭৬ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে আর্জেন্টিনো জুনিয়র্সের হয়ে পেশাদার ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু তার। ৫ বছর পর বোকা জুনিয়র্সে এক বছর খেলেছেন ম্যারাডোনা। ১৯৮২ থেকে ৮৪ সাল বার্সেলোনা মাতিয়েছেন ডিয়েগো।

তবে ম্যারাডোনার ক্লাব ফুটবলের স্বর্নালি সময় কেটেছে ইতালির নাপোলিতে। ১৯৮৪ থেকে ক্লাবকে জিতিয়েছেন ১টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও দুটি সিরি-আ শিরোপা। ম্যারাডোনার এমন কীর্তির সম্মানে নাপোলির ১০ নম্বর জার্সি দেয়া হয় না আর কোন স্ট্রাইকারকে। এরপর সেভিয়া, নিউওয়েলস ওল্ড বয়জে আর বোকা জুনিয়ার্সে ২ বছর খেলার পর ১৯৯৭ সালে অবসর যান ম্যারাডোনা।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষে হলেও ম্যারাডানোর কীর্তি সবসময় অম্লান ভক্তদের মনে। ম্যারাডোনা না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেও যুগ যুগ স্মৃতিতে ভাস্মর থাকবেন তিনি। কথাতেই তো আছে- কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply