মালয়েশিয়ায় স্বামী-সন্তান ছেড়ে প্রেমিকের খোঁজে টাঙ্গাইলে!

|

মালয়েশীয় ব্যবসায়ী জুলিজা বিনতে কামিস। ফেসবুকে তার পরিচয় ঘটে বাংলাদেশি যুবক মনিরুলের সাথে। প্রকৃতির কোনো এক অমোঘ ইশারায় তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তারপর আরও বহু গল্পের মতো জুলিজা ছুটে আসেন বাংলাদেশে। উদ্দেশ্য মনিরুলকে বিয়ে করা। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে মনিরুলের হাত ধরে চলে যান তার গ্রামের বাড়ি- টাঙ্গাইলের সখীপুর।

মনিরুল টাঙ্গাইল পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের ঈমান আলীর ছেলে। সরকারি মুজিব কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অল্প সময়ের মাঝেই মনিরুলের পরিবারের সদস্যদের মন জয় করেন জুলিজা। আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ খবরে পুরো এলাকায় চাঞ্চল্য। গণমাধ্যমকর্মীরাও আগ্রহী হয়ে দেখতে যান জুলিজাকে। জুলিজা তাদের জানান, বাংলাদেশের প্রকৃতি ও মানুষ তার ভালো লেগেছে। শ্বশুর বাড়ির খাবারের সাথে মানিয়ে নিতে খানিকটা অসুবিধে হলেও তাদের আন্তরিকতায় সে মুগ্ধ। জুলিজা জানান, বিয়ের পর মনিরুলকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাবেন তিনি।

অন্যদিকে, জুলিজাকে পেয়ে যতটা না আনন্দিত তার চেয়ে বেশি বিস্মিত মনিরুল। যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না, তার ভালোবাসার টানে নিজের দেশ ছেড়ে ছুটে এসেছে এক নারী! বিদেশি মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পাওয়ার আনন্দে মাতোয়ারা মনিরুলের মা-ও।

গত শুক্রবার রাতে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দূরদূরান্ত থেকে মনিরুলের আত্মীয়-স্বজন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন। এটি যে যেনতেন বিয়ে নয়!

ঘটনা এতটুকুতে থামলেই চমৎকার একটি নাটক হয়ে যেতো। কিন্তু থামলোনা, বরং ডালপালা মেলতে থাকলো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা যখন শুরু হলো, তখন মালয়েশিয়া থেকে এলো একটি বিশেষ ফোনকল।

ফোনের অপর প্রান্তে থাকা এক বাংলাদেশি দাবি করলেন, জুলিজা তার স্ত্রী! শুধু তাই নয়, তাদের নাকি ০চার-চারটি সন্তান আছে! ভদ্রলোক নিজেকে আজগর আলী নামে পরিচয় দেন।

১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়া যান আজগর। সেখানে পরিচয়, অতঃপর প্রণয় জুলিজার সাথে। জানান, ব্যবসার কাজে ক’দিন তিনি বাইরে ছিলেন। এর মাঝে জুলিজা তার ২ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান; ফেলে আসেন এক বছরের শিশু সন্তানকেও!

 

স্বামী-সন্তানসহ জুলিজা

এদিকে, পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ায় জুলিজার বাবা-মা বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

মনিরুলের একজন স্বজন জানান, দ্রুতই ওই নারীর মা ছামিনা বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। তিনি এসে মেয়েকে নিয়ে আবার মালয়েশিয়া ফেরত নিয়ে যাবেন বলে ফোনে মনিরুলের পরিবারকে জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ খবর মনিরুলের স্বজনেরা জানার পর বিয়ের আয়োজন থেমে যায়। স্বজন-প্রতিবেশীরাও একে একে চলে যেতে থাকেন। সে রাতেই জুলিজাকে মনিরুলের মামা নওশের আলীর হেফাজতে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

নওশের আলী বলেন, ‘বিয়ের আয়োজন চলছিল ঠিকই। কিন্তু ওই মেয়ে সম্ভবত আমার ভাগ্নে মনিরুলের সাথে মিথ্যা কথা বলেছে। নিজেকে অবিবাহিত দাবি করেছে। মেয়েটির মা আজকালের মধ্যে আমাদের বাড়িতে আসার কথা। তিনি এলেই সবকিছু স্পষ্ট হবে।’

মনিরুলের বাবা ইমান আলী বলেন, ‘মেয়েটি আমাদের বলেছিল ওর বয়স ২২ বছর। এখন শুনি ৩২। আবার চার সন্তানেরও মা! ঘটনা সত্য না মিথ্যা বুঝতে পারছি না। ওর মা দেশে এলেই আসল সত্য জানা যাবে।’

ঘটনা এতটুকুতেও থামতে পারতো। কিন্তু থামাতে দিলেন না মনিরুল-জুলিজা। প্রেমের কী শক্তি, সকল সীমানা ডিঙাতে চায়! অদম্য জুটি জুলিজা ও মনিরুল শনিবার থেকে লাপাত্তা! তাদের ফোন দুটিও বন্ধ রয়েছে।

 

(টাঙ্গাইল প্রতিনিধি শামীম আল মামুনের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি।)
যমুনা অনলাইন: টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply