মসজিদের ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা করায় বাদির বাড়িতে হামলা

|

পাবনা প্রতিনিধি:

পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একটি মসজিদের জলকর ইজারার ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।

উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের গদাই রূপসী গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমিটির একজন সদস্য ও গ্রামের এক ব্যক্তি আদালতে আলাদা দু’টি মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোকজন শনিবার দুপুরে মামলার একজন বাদির বাড়িতে গিয়ে ইট-পাটকেল ছুড়ে হামলা করে। পরে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মামলার এজাহার ও সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে গদাই রূপসী
গ্রামের বড় জামে মসজিদের নামে তিনটি জলকর পত্তনী নেওয়া হয়। তিনটি জলকরের আয়তন প্রায় ৪৫ বিঘা। এছাড়া কিছু ফসলি সম্পত্তি রয়েছে মসজিদের নামে।

এই জলকর ও ফসলি সম্পত্তি বাৎসরিক প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ইজারার এই টাকা দিয়ে গ্রামের দুইটি মসজিদের সংস্কার, সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ, ইমামের বেতন ও মাঝেমধ্যে জলকর পুনঃ খনন এবং সংস্কার করা হয়।

এ অবস্থায় গত ৭ বছর আগে গ্রামের সাইদুল ইসলাম সভাপতি ও বাবু আহমেদ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয় মসজিদ কমিটির। কিন্তু দায়িত্বে আসার পর থেকেই মসজিদের বিশাল অঙ্কের এই টাকা তারা ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন করেন না এবং কমিটির সদস্যদের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব দেন না। এমনকি তারা নতুন কমিটি না করে জোরপূর্বক তাদের কমিটি সাত বছর ধরে বহাল রেখেছেন।

এই সাত বছরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কয়েকজন সদস্যের সাথে মিলে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন কমিটির একাধিক সদস্য। এতে কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম গত ১০ দিন আগে পাবনার সহকারী জজ আদালতে সভাপতি ও সম্পাদক সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়। এতে কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মামলার বাদি নুরুল ইসলাম ও সাক্ষী জালালের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এতে বাধ্য হয়ে জালাল উদ্দিনও গত ৫ দিন আগে আদালতে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা দায়ের করেন।

এক পর্যায়ে শনিবার দুপুরে জালাল উদ্দিনের বাড়ি ঘেরাও করে অন্তত ৫০ জন হামলাকারী বাইরে থেকে বাড়ির মধ্যে ইট ও ঢিল ছোড়ে। এসময় জালাল উদ্দিন বাড়ির প্রধান গেট আটকে দিয়ে মোবাইল ফোনে ভাঙ্গুড়া থানায় অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে থানার ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মামলার বাদি আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম বলেন, সাত বছর আগে গঠিত এই কমিটি হওয়ার পর থেকেই আয়-ব্যয়ের হিসাব না দিয়ে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন। তাই আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ও মামলার সাক্ষী জালাল উদ্দিনকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন তারা। আমরা ভয়ে অনেকটা আত্মগোপন করে রয়েছি।

এ বিষয়ে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য আক্কাস আলী বলেন, মসজিদের জলকল ইজারার টাকা নিয়ে মসজিদ কমিটির মধ্যে ঝামেলা চলছে। তাই উভয়পক্ষের মধ্যে এরকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিষয়টি আদালত এবং থানা প্রশাসন দেখছে।

অভিযোগের বিষয়ে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবু আহমেদ বলেন, মসজিদের জলকর ইজারার কোনো টাকা কেউ তসরুপ করেনি। সকল টাকার আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্ধারিত সময় দেওয়া হয়। ইজারার টাকা দিয়ে মসজিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে ও জলকর সংস্কার কাজে খরচ করা হয়েছে। তাই ইজারাদারের কাছ থেকে দফায় দফায় টাকা নেওয়ায় ব্যাংকে রাখা সম্ভব হয়নি। টাকা নেয়ার পরপরই তার খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম প্রতিহিংসা বশত আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তবে জালাল উদ্দিনের বাড়িতে হামলার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গুড়া থানার ওসি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে আদালতে দায়ের করা একটি মামলার বাদি জালালের বাড়িতে হামলা করা হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

যেহেতু এ বিষয়ে আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তাই নতুন করে আর এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হবে না। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশ সর্বদা ওই এলাকা নজরদারিতে রাখবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply