কুয়াকাটায় নৌকা প্রার্থীর কর্মীদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১৮ জন আহত

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমশই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গত টানা তিনদিন স্বতন্ত্র (আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী) মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে কর্মীদের আসতে পথিমধ্যে দফায় দফায় বাধা এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার পর বৃহস্পতিবার নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা হামলা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ১৮ জনকে আহত করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসভার চার নং ওয়ার্ডের মেলা পাড়া এলাকায় হামলার এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে মহিপুর থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় নৌকার আটজন সমর্থকও আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়।

আহতরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আ. রব মাঝী (৫৫), আ. হক হাওলাদার (৬০), মো. বারেক মিয়া (৪০), সেলিম বিশ্বাস (৫০), মো. সোহেল রানা (৩০), মো. সগির মোল্লা (৩৫), আলী হায়দার (৩৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৪২), মো. রাসেল মিয়া (২৪), মো. লিমন (২০), আলামীন মাদবর (৩৫), আলামীন হাওলাদার (২৫), মো. করিম মিয়া (৪০), মোবারক হোসেন (৩০), মো. ইউসুফ হোসেন (৩০), মো. শাহআলম
(৪০), মো. আলাউদ্দিন (৪০) ও মো. ফিরোজ (৩৮)।

এদেরকে কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে নৌকা
প্রার্থীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে এ ঘটনায় তাদের আটজন আহত হয়েছে যাদেরকেও একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- মো. রফিকুল ইসলাম (৩৫), মো. রাকিবুল হাসান (১৮), মো. হাসিব (২৫), মো. ইউসুফ মোল্লা (২৬), মো. রাসেল (২২), আবু ছালেহ (১৮), মো. শাহজালাল (৩৮) এবং মো. দুলাল হোসেন (৩৫)।

অথচ এই আটজনের বিরুদ্ধেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ করছেন
স্বতন্ত্র প্রার্থীর আহত সমর্থকরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীর আহত আ. হক হাওলাদার (৬০) জানান, আজ বিকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের জগ প্রতীকের পূর্ব নির্ধারিত উঠান বৈঠকের দাওয়াত দিতে গেলে নৌকার প্রার্থী আ. বারেক মোল্লার কর্মী হাসিব, বশির, ফারুকসহ আরও কয়েকজন তাদের গতিরোধ করে। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক আ. হক, সেলিম ফিরোজসহ তাদের সাথে থাকা ৭ থেকে ৮ জনকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।

খবর পেয়ে কিছুদূর থেকে জগ প্রতীকের অন্যান্য সমর্থকরা ঘটনাস্থলে আসলে তাদের সাথেও কথা কাটাকাটি হয়। পরে নৌকার প্রার্থীর অন্যান্য কর্মীরা ৪ থেকে ৫টি মোটরসাইকেলে লাঠিসোটা নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে আহত করা হয় জগ প্রতীকের অন্তত
১৮ জন কর্মী ও সমর্থককে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দুই প্রার্থীকে নিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি ঘোষণা দেন মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান।

কুয়াকাটা ২০ শয্যা হাসপাতালের ডা. মাহামুদুল হাসান অপু জানান, আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদার জানান, নৌকার প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের হামলায় আমার সমর্থকদের মধ্যে ১৮ জন আহত হয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচনে প্রভাবমুক্ত প্রচারণার সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সহায়তা দাবি করছি। প্রতিদিন আমার
কর্মী সমর্থকদের বাধা দেয়া হচ্ছে, আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। আলীপুর মহিপুর থেকে বহিরাগত দিয়ে নৌকার প্রার্থী গোটা কুয়াকাটা ভরে ফেলছে। প্রশাসন যদি এই মুহূর্তে কঠোর নজরদারি না করে তাহলে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী আ. বারেক মোল্লা জানান, প্রশাসন পুরো বিষয়টি দেখভাল করছে।

মহিপুর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও জানান, শেষ বারের মত দুই প্রার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে এরপর আর ছাড় দেয়া হবে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পুলিশের পক্ষ
থেকে যা যা করা দরকার সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় বারের মত কুয়াকাটা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) একজন, বিএনপির একজন এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের একজন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply