সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল নামে যাত্রা শুরু

|

শিক্ষার অধিকার আদায়ে দীপ্ত শপথে কাজ করবে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়া হয়।

শনিবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় আহবায়ক তাজ নাহার রিপন এ ঘোষণা দেন।

একইসাথে আরিফ মঈনুদ্দীনকে সভাপতি, ছায়েদুল হক নিশানকে সহ-সভাপতি এবং উজ্জ্বল বিশ্বাসকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলন শেষে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের একটি র‌্যালি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি আরিফ মঈনু্দ্দীন বলেন, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-আন্দোলনের পটভূমিতে ১৯৮৪ সালের ২১ জানুয়ারি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করেছিলো। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জোটবদ্ধভাবে এবং এককভাবে শিক্ষা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আপোষহীন সাহসী ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, সংগঠনের অভ্যন্তরে আদর্শিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে গুরুতর মতপার্থক্যের কারণে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত। ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’ নাম নিয়ে এখন তিনটি ছাত্রসংগঠন কাজ করছে। এ অবস্থায় সংগঠনের নাম নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তির অবসান ঘটানোর জন্যে এবং নিজেদের আদর্শিক ও সাংগঠনিক পরিচয় মূর্ত করে তোলার লক্ষ্যে আমরা সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল নতুন নামে ছাত্রসমাজের সামনে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমরা মনে করি, পুরনো নামের সাথে অনেক স্মৃতি ও আবেগ জড়িয়ে থাকলেও সংগঠনের আদর্শ ও লক্ষ্যই আমাদের কাছে প্রধান। লক্ষ্যাভিমুখি সংগ্রামে অবিচল থাকার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমরা আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি, আমাদের সংগঠনের নতুন নাম- গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীন, বিমূর্ত আদর্শের কোনো ছাত্রসংগঠন নয়। আমরা অকপটে ও দ্বিধাহীন চিত্তে ঘোষণা করছি, আমাদের সংগঠনের দার্শনিক ভিত্তি সমাজতন্ত্র-সাম্যবাদ।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের গৌরবদীপ্ত সংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করে ছাত্র-আন্দোলনের নতুন ইতিহাস রচনায় আমরা দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করছি। সর্বজনীন, বৈষম্যহীন, সেক্যুলার, বিজ্ঞানভিত্তিক, একই পদ্ধতির গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যে আমরা লড়াই করবো। শিক্ষা-আন্দোলনকে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে অবিচ্ছিন্ন মনে করি। গণতন্ত্রের সংগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল অটল দৃঢ়তা প্রদর্শন করবে। গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সমাজ বিপ্লবের সহায়ক শক্তি হিসেবে ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করবে। আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, ৩৭ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, নতুন চিন্তা ও উপলব্ধির ভিত্তিতে সংগঠন এবং আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করবো।

আমরা মনে করি, পুঁজিবাদী শোষণ ও ফ্যাসিবাদী শাসনের অনুগামী বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মীয় মৌলবাদী ধারার ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রসমাজের আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা ধারণ করতে পারে না। তাদের নীতিহীন রাজনীতি, ভোগবাদী সংস্কৃতি ও কূপমণ্ডূক দৃষ্টিভঙ্গি ছাত্রসমাজ অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করবে। অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার পক্ষে নৈতিক অবস্থান ও সক্রিয় ভূমিকা থাকলেও, রাজনৈতিক ও দার্শনিক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এবং গতানুগতিক কর্মপদ্ধতির কারণে বাম ধারারছাত্র-সংগঠনগুলো ব্যাপক ছাত্রসমাজকে সংগঠিত করতে পারছে না। গণজাগরণ মঞ্চ, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো। কিন্তু, সে আন্দোলনকে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্যে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে বাম ধারার ছাত্র সংগঠনগুলোর দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে। এ বাস্তবতায় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ছাত্র-আন্দোলনে নতুন সম্ভাবনা ও আশাবাদ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে- এ ব্যাপারে আমরা আস্থাশীল।

এ মুহূর্তে আমাদের জরুরি দাবি:
১. স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হল-হোস্টেল খুলে দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন বেতন-ফি মওকুফ করতে হবে।
২. মতপ্রকাশের কারণে হয়রানি-নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হল-হোস্টেলে একক দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply