স্বর্ণের দুলের জন্যই হত্যা করা হয় শিশু কাশফিয়াকে

|

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ৮ বছরের শিশু কাশফিয়া ওরফে শেফা হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদান করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হোসাইনের তৃতীয় আদালতে দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর আগে তারা পুলিশের কাছেও সত্যতা স্বীকারসহ হত্যাকাণ্ডের পরের কিছু ঘটনা দেয়।

শিশু কাশফিয়া সরাইল উপজেলা সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রামের ফার্নিচার ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের মেয়ে। এর আগে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সৈয়দটুলা গ্রামের নোয়াহাটি এলাকার একটি ঝোপ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্বীকারোক্তিতে হোসেন মিয়া (১৮) ও রিমি (২২) আক্তার জানান, মূলত শিশুর কানে থাকা স্বর্ণের দুল নেয়ার জন্যই পরিকল্পিতভাবে তাকে ডেকে নেয়া হয়। দুল নেয়ার সময় শিশুটি চিৎকার করলে তাকে প্রথমে গলা চেপে ও পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুই আসামি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। পরে একটি ঝোঁপঝাড়ে নিয়ে লাশ ফেলে দেয়।

হত্যার সাথে জড়িত রিমি আক্তার খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়ি গিয়ে গোসল করে ঘুমিয়ে পড়েন। এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে কাশফিয়া নিখোঁজ হয়। একদিন পর বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ির কাছের ঝোপঝাড়েই তার লাশ পাওয়া যায়। সৈয়দটুল গ্রামের পশ্চিম পাড়ার আব্দুল মতিনের মেয়ে রিমি আক্তার ও পূর্ব পাড়ার শাহবাজ আলীর ছেলে হোসেন মিয়া এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত।

এর আগে পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে রিমি আক্তার, হোসেন মিয়া, জামিল ও সুশীল দত্ত নামে ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় রিমির পিতা আবদুল কাদির বাদি হয়ে থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে বুধবার দুপুরে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

এই ব্যাপারে সরাইল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন শুক্রবার বিকালে জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে কাশফিয়ার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তার খোঁজে গ্রামে মাইকিংও করে শিশুটির পরিবার। শিশুটির সাথে রিমির ভালো সম্পর্ক থাকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে রিমির দেয়া তথ্যমতেই শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। রিমি যেসব তথ্য দিচ্ছে সেগুলো যাচাই করা হয়।

তার দেয়া তথ্য মতেই হোসেন ও জামালকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে শিশু কাশফিয়ার কানের দুল কেনার অপরাধে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুশীল দত্তকে আটক করা হয়।

স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি জানান, শিশুটির কাছে থাকা কানের দুল ছিনিয়ে নিতে পূর্ব পরিকল্পিত হোসেন মিয়ার সাথে কথা বলে রিমি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিমি ওই শিশুকে ঘোড়ার খেলা দেখানোর কথা বলে হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যায়। হোসেন ঘরে ঢোকার পর শিশুটির কাছ থেকে কানের দুল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় শিশুটি চিৎকার শুরু করলে প্রথমে তাকে গলা টিপে ও পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর হোসেন ও রিমি শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে রিমি কানের দুল নিয়ে সুশীল দত্তের দোকানে নিয়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পরও খুব স্বাভাবিক ছিলো রিমি। বাড়িতে গিয়ে গোসল করে সে ঘুমিয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, রিমি ও হোসেন মিয়াসহ চার আসামিকেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জামিল ও সুশীল দত্তকে রিমান্ডে আনা হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply