লকডাউনে সন্তানের জীবন বাঁচাতে ১১০ কিলোমিটার রিকশা চালিয়ে হাসপাতালে বাবা

|

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :

লকডাউনে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে ঠাকুরগাঁও থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘপথ নিজেই রিকশা চালিয়ে ৭ মাসের অসুস্থ সন্তানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান তারেক ইসলাম নামে এক অসহায় বাবা।

শনিবার সকাল ৬টায় অসুস্থ সন্তান জান্নাত ও স্ত্রী সুলতানা বেগমকে সাথে নিয়ে নিজ বাসা থেকে বের হয়ে দুপুর সোয়া তিনটায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান তারেক। সেখানে জরুরি বিভাগে অসুস্থ জান্নাতকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতকে শিশু বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেন। বর্তমানে জান্নাত শিশু বিভাগের ১৮ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে।

তারেক ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা দক্ষিণ সালন্দর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে। তারেক পেশায় একজন রিকশা চালক। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে খুব কম বয়স থেকে রিকশা চালাতে শুরু করেন তিনি। রিকশা চালিয়েই একসময় বাবা আনোয়ার হোসেনকে সহযোগিতা করতেন। বর্তমানে স্ত্রী সুলতানা বেগমসহ সংসারে তার নয় বছর ও তিন বছর বয়সী আরও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে।

রিকশা চালানোর পাশাপাশি সাউন্ড সিস্টেম অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি। কিন্তু করোনার কারণে গত একবছর যাবত বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাড়তি আয় বন্ধ হয়ে যায় তার। বর্তমানে লকডাউন পরিস্থিতিতে রিকশা চালাতে না পেরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে তার।

তারেক ইসলাম জানান, গত ১৩ এপ্রিল রাতে শিশু জান্নাত রক্ত পায়খানা করলে তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসা দেয়ার পর চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য জান্নাতকে রংপুরে রেফার্ড করেন। কিন্তু লকডাউনে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার টাকা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। গত চারদিন কোথাও টাকা জোগাড় করতে না পেরে সন্তানের জীবন বাঁচাতে অবশেষে বাধ্য হয়ে (১৭ এপ্রিল শনিবার) নিজে রিকশা চালিয়ে সন্তানকে নিয়ে যায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

রংপুরে কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতকে দেখার পর কিছু ওষুধ ও স্যালাইন দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণ শেষে অপারেশন করতে হতে পারে বলে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু অপারেশন করার মতো টাকা তার কাছে নেই। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধ, স্যালাইন, ইনজেকশন কেনার জন্যও তার কাছে কোনো টাকা নেই। এ অবস্থায় অসহায় রিকশাচালক তারেক ইসলাম তার অসুস্থ শিশু সন্তানের জীবন বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তারপরও শিশু জান্নাতের খোঁজখবর নিয়ে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply