ত্ব-হা’র স্ত্রীর কাছে মুক্তিপণ চাওয়া মেহেদির অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ; হোয়াটসঅ্যাপ সচল

|

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর:

ইসলামি বক্তা ও ইউটিউবার আহছানুল আদনান ওরফে আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুরের মোবাইল ফোনে আশা মেহেদি হাসান পরিচয়ধারী ব্যক্তির এখন পর্যন্ত কোনো অস্তিত্ব পায়নি পুলিশ। মেহেদি তার কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছিলেন। অন্যদিকে ত্ব-হার হোয়াটসঅ্যাপ সচল আছে। সেটি থেকে মেসেজ রিপ্লাই করা না হলেও সিন করা হচ্ছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, ইন্টারনেটভিত্তিক নম্বর (০৯৬৯৬৯৭৭০৬৪৭) থেকে নিখোঁজ ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের স্ত্রীর কাছে ফোন আসা সেই মেহেদি হাসানকে ট্রেস করা এখনো সম্ভব হয়নি। তার কোনো অস্তিত্বও পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে মেসেজ সিন হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আদনানের বোন রিতিকা রুবাইয়াত ইসলাম অনন্যা যমুনা টেলিভিশনকে জানান, নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন শনিবার সন্ধ্যায় ইন্টারনেটভিত্তিক নম্বর ০৯৬৯৬৯৭৭০৬৪৭ থেকে আমার ভাবি আবিদা নুরের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। নাম্বারটি আমার ভাইয়া ব্যবহার করতেন। কিন্তু বহুদিন থেকে সেটি বন্ধ ছিল। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে নিজেকে মেহেদি হাসান বলে পরিচয় দেন এক ব্যক্তি। বলেন, আদনানসহ অন্যরা তাদের কাছে আছে। টাকাপয়সা দিলে ছেড়ে দেয়া হবে। এসময় তিনি ইমো নাম্বার খুলতে বলেন। পরে ফোন কেটে দেন। আমরা বার বার চেষ্টা করলেও ওই ফোনে কল ঢুকেনি। ভাবির নাম্বারে আমি ইমো খুললে ওই ব্যক্তি ইমোতে মেসেজ করেন এবং সেখানেও তিনি একই ধরনের কথা বলেন ও টাকা চাওয়ার বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য বলেন।

অনন্যা আরো জানান, রোববার সন্ধ্যায় ঠিক একই সময়ে বেশ কয়েকবার আমার ভাইয়ের টেলিটক মোবাইল ফোন থেকে ভাবির নাম্বারে ফোন আসে। ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা ফোন ধরতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার ওই টেলিটক ফোনে ভাবির নম্বর থেকে কল ব্যাক করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে রাত এগারোটায় ইন্টারনেটভিত্তিক আলাপ নম্বরে ফোন দেই ভাবির ফোন থেকে। অপরপ্রান্ত থেকে মেহেদি হাসান নামের ওই ব্যক্তি ফোনটি ধরে জিজ্ঞেস করেন, আপনাদের টাকা জোগাড় হয়েছে? টাকা দিলে আদনানদের ছেড়ে দেব।

অনন্যা বলেন, এসময় আমি ফোনটি আমার মায়ের কাছে দেই। আমার মা তখন ফোনে তাকে বলেন, আমি আমার ছেলের কন্ঠ চিনি। আপনি আমার ছেলেকে দেন তার সাথে কথা বলি। তারপর টাকা জোগাড় করবো। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে সেটি না করে রাগ করে ফোন কেটে দেয়া হয়। এরপর ওই নম্বর দুটিতে আমরা বার বার ফোন দিলেও তা বন্ধ পাচ্ছি।

অনন্যা আরও বলেন, ওই টেলিটক নম্বরটি দিয়েই আমার ভাইয়ের হোয়াটসঅ্যাপ খোলা। হোয়াটসঅ্যাপে আমি বিভিন্ন ধরনের মেসেজ পাঠাচ্ছি। কিন্তু কোনো রিপ্লাই পাচ্ছি না। তবে আমার মেসেজগুলো সিন করার হচ্ছে।

অনন্যা বলেন, সব বিষয়ে আমরা পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশের কাছে তো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আছে। যেখানে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ সিন করা হচ্ছে। তাহলে হোয়াটসঅ্যাপের সূত্র ধরে কেন আমার ভাইসহ অন্যদের উদ্ধার করা হচ্ছে না?

আদনানের মা আজেদা বেগম যমুনা টেলিভিশনকে জানান, আজ আট দিন হয়ে গেল আদনানসহ অন্যদের কোনো খোঁজ করতে পারলো না পুলিশ। আমাকে আর কত রাত জেগে এবং কেঁদে কাটাতে হবে?

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টা ৩৭ মিনিটের দিকে গাবতলী ও মিরপুরের মাঝামাঝি স্থানে নিখোঁজ হন ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান, সফরসঙ্গী মোহাম্মদ আবদুল মুহিত আনসারী, ফিরোজ আলম এবং গাড়িচালক আমির উদ্দিন মোঃ ফয়েজ। এ ঘটনায় ঢাকায় দারুস সালাম থানায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিকুন্নাহার জিডি কিংবা মামলা দিতে গেলে তা গ্রহণ হয়নি। পরে রংপুর কোতোয়ালি থানায় আদনানের মা আজেদা বেগম এবং আমির উদ্দিনের ছোট ভাই ফয়সাল পৃথক দুটি জিডি করেন। গত ১৪ জুন রংপুরের জিডির সূত্র ধরে রাজধানীর পল্লবী থানায় সাবিকুন্নাহারের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। এরইমধ্যে সাবিকুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, র‍্যাব হেডকোয়ার্টারে দেখা করে আদনানসহ নিখোঁজদের সন্ধানের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। করেছেন সাংবাদিক সম্মেলন। এখন পর্যন্ত তার সন্ধান জানাতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে আবু ত্ব-হা আদনানের সন্ধানের দাবিতে জাতীয় সংসদে আলোচনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও সমাবেশ হচ্ছে। তার সন্ধান চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

আবু ত্ব-হা আদনান রংপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৬ সালে এসএসসি, রংপুর সরকারি কলেজ থেকে ২০০৯ সালে এইচএসসি এবং কারমাইকেল কলেজ থেকে দর্শন বিভাগের অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেন। আরবি শেখেন বাড়ির পাশের আল জামিয়া আল সালাফিয়া মাদ্রাসায়। ২০১৮ সালে চ্যানেল নাইনের আলোকিত জ্ঞানী অনুষ্ঠানে সারা দেশের মধ্যে রানার্সআপ হয়েছিলেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিনি ওমরা পালন করে আসেন। এরপর তিনি ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। ওই ইউটিউব চ্যানেলে তিনি কোরআন শিক্ষার আসর করেছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন মসজিদে তিনি খুতবা এবং ইসলামি অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে বক্তব্য রেখে সেগুলো ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করতেন। ইন্টারনেটভিত্তিক তার বিপুল পরিমাণ ফ্যান-ফলোয়ার্স তৈরি হয়েছিল।

রংপুর মহানগরীর পায়রা চত্বর সেন্ট্রাল রোডের হাজী লেনের মামার বাড়িতে মাসহ থাকতেন তিনি। আড়াই বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করে সংসার চালাতেন তিনি। তার প্রথম স্ত্রী আবিদা নুরের তিন বছর বয়সি ছেলে এবং দেড় মাস বয়সী কন্যা সন্তান আছে। তিন মাস আগে তিনি ঢাকার মিরপুরে সাবিকুন্নাহার নামে এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply