রূপকথা লিখে কোয়ার্টার ফাইনালে ডেনিশরা

|

কিংবদন্তি ডেনিশ লেখক হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন হয়তো ভাবছেন তিনি আর একা নন, ডেনমার্কের হয়ে রূপকথা লেখার জন্য এখন আছে পুরো একটা স্কোয়াড! ইউরো যাত্রা যাদের শুরু হয়েছিল কল্পনাতীত ভয়ঙ্কর চিত্রনাট্যে, তারাই এখন উল্লাস করছে উৎসবের উৎসাহে। প্রথম ম্যাচে মাঠে হঠাৎই ডেনমার্ক মিডফিল্ডের প্রাণভোমরা এরিকসেনের হৃৎস্পন্দন থেমে যাওয়া আর প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যাওয়ার ধাক্কা সহ্য করা দলটিই টানা দুই ম্যাচে ৪টি করে গোল করে পৌঁছেছে ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে।

শেষ ষোলোর প্রথম ম্যাচে বেল, রামসিদের ওয়েলসকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ডেনমার্ক বজায় রেখেছে তাদের স্বপ্নযাত্রা। দুই অর্ধে স্ট্রাইকার ক্যাস্পার ডলবার্গের দুই গোল এবং শেষ দিকে জোয়াকিম ম্যায়েল ও মার্টিন ব্রেথওয়েটের গোলে ৯০ মিনিটে মাঠের আধিপত্যকে ডেনিশরা টেনে এনেছে স্কোরলাইনেও।

ডেনিশ ডিফেন্সের সামনে ওয়েলসের আক্রমণগুলো খুঁজে পায়নি পূর্ণতা। গোলের সবচে কাছে গিয়েছিলেন গ্যারেথ বেল। প্রথমার্ধে ডি-বক্সের ডান প্রান্ত থেকে তার শট অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। বেলের এই প্রচেষ্টা আর ম্যাচের ৯০ মিনিটে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ করে হ্যারি উইলসনের লাল কার্ড দেখা ছাড়া পুরো ম্যাচে উল্লেখ করার মতো তেমন কিছুই করেনি ওয়েলস। বলের দখল কিংবা আক্রমণ, ম্যাচে সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিল ডেনমার্ক। গোলের উদ্দেশে ১৬টি শট নেয় তারা। ৮টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ওয়েলসের ১১ শটের কেবল একটি লক্ষ্যে ছিল। সেরা তারকা গ্যারেথ বেল ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।

ম্যাচের শুরুতে ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেল তার দলের পক্ষ থেকে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের প্রতি শুভ কামনা জানান এবং ‘এরিকসেন নাম্বার টেন’ লেখা জার্সি বিনিময় করেন ডেনমার্ক অধিনায়ক সিমন কায়েরের সাথে।

শুরুতেই বেলের মাধ্যমে আক্রমণে যায় ওয়েলস। ২৭ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ফল পায় ডেনমার্ক। বল পেয়েই ঘুরে এগিয়ে যান ডলবার্গ, তীব্রগতির শটে স্থবির করে দেন ওয়েলস ডিফেন্স ও গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ডকে।

ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ওয়েলসের ভুলের কাজে লাগিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ডেনমার্ক। ডান দিক দিয়ে বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পাস বাড়ান ব্র্যাথওয়েট। ওয়েলস ডিফেন্ডার নেকো উইলিয়ামস ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল তুলে দেন বক্সের থাকা ডলবার্গের পায়ে। ডান পায়ের শটে দ্বিতীয় গোল করতে ভুল করেননি তিনি।

গোল শোধে মরিয়া ওয়েলস উন্মুক্ত করে দেয় তাদের ডিফেন্স। এ সুযোগে ম্যাচের শেষে ডিফেন্সের অমোচনীয় ভুলে গোল পান জোয়াকিম ম্যায়েল। আর কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন মার্টিন ব্রেথওয়েট।

গ্রুপ পর্বে ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার সময় ডেনমার্কের তারকা মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দু’সপ্তাহ পর কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো ডেনমার্ক। সফল অপারেশনের পর আইসিডি লাগিয়ে এরিকসেন ছেড়ে গিয়েছেন হাসপাতাল।

আমস্টারডামের ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনায় কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের পর ম্যাচের নায়ক ডলবার্গ কেবল বললেন, সবকিছুই অবিশ্বাস্য! আমি জানি না কীভাবে প্রকাশ করবো এই সময়টাকে। আজ যা হয়ে গেল সেটি বাস্তব কিনা আমার জানা নেই।

সত্যিই তো! হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের দেশে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের সতীর্থদের রচিত রূপকথা আর বাস্তব এখন পথ চলছে হাতে হাত ধরে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply