ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের বেঁচে থাকা নির্ভর করে জন্মস্থানের ওপর: গবেষণা

|

ত্রুটি নিয়ে জন্ম নেয়া নবজাতকদের নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে নতুন এক গবেষণায়।

জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের বেঁচে থাকা সে কোথায় জন্মেছে তার ওপর নির্ভর করে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্বের ৭৪ টি দেশের ২৬৪ টি হাসপাতালের প্রায় ৪০০০ শিশুর ওপর ওই গবেষণাটি চালানো হয়।

শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণাটিতে দেখা গেছে খাদ্যনালীর জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মানো শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকি যেখানে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে ২০ জনে ১ জন, মধ্যম আয়ের দেশে তা প্রতি ৫ জনে ১ জন এবং নিম্ন আয়ের দেশে তা প্রতি ৫ জনে ২ জন।

গ্যাস্ট্রোস্কাইসিস খাদ্যনালীর একটি জন্মগত ত্রুটি যেখানে জন্মের সময় বাচ্চার খাদ্যনালী নাভির কাছে একটি ছিদ্র দিয়ে পেটের বাইরে বের হয়ে থাকে। এই রোগের মৃত্যুর হারে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য দেখা গেছে উচ্চ ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে যেখানে এই রোগে মৃত্যুর হার শতকরা ১ ভাগের কম এবং সব শিশু কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই স্বাভাবিক জীবন যাপন করে, সেখানে নিম্ন আয়ের দেশ গুলোতে এই রোগে মৃত্যুর হার শতকরা ৯০ ভাগের বেশি।

এই গবেষণার মূল গবেষক ডাঃ নাওমি রাইট বলেন, ভৌগলিক অবস্থান একটা শিশুর জীবন নির্ধারণ করতে পারে না যখন তার সমস্যা টা অপারেশন করে ঠিক করা সম্ভব। যদি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে শিশুদের সার্জারি সেবার উন্নতি করা না হয় তাহলে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণের এর যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করা যাবে না।

বিশ্বব্যাপী ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ৫ম স্থানে আছে জন্মগত ত্রুটি। যার ফলে বেশির ভাগ শিশুর মৃত্যুই হয় নবজাতক বয়সে। খাদ্যনালীর জন্মগত ত্রুটির জন্য শিশুর মৃত্যু নিম্ন/মধ্যম আয়ের দেশ গুলোতে অনেক বেশি কারণ জরুরী সার্জারি ছাড়া এই জটিলতা নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুগুলোকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে গর্ভাবস্থায় বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি নির্ণয়ের জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। যদি কোন বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে তাকে এমন হাসপাতালে প্রসবের ব্যবস্থা করা হয় যেখানে জরুরি শিশু সার্জারির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বেশির ভাগ মায়েরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যার ফলে অনেক সময় জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশুরা অনেক দেরি করে হাসপাতালে আসে যখন তাদের আর সার্জারি করেও বাঁচানো যায়না।

এই গবেষণায় শিশু সার্জারির পেরিওপারেটিভ কেয়ার (সার্জারির আগে ও পরে রোগীর যত্ন) এর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। যেসব হাসপাতালে শিশুদের জন্য কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস ও প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্টসের ব্যবস্থা নেই সেসব হাসপাতালে অপারেশনের পর শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। এছাড়াও দক্ষ পেডিয়াট্রিক এনেস্থেটিস্ট এর স্বল্পতা এবং সার্জারির সময় সেফটি মেজার অনুসরণ না করাও শিশুমৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

এরকম অবস্থায় শিশু মৃত্যুহার কমানোর জন্য তিনটি মূল বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে,

১। শিশুর জন্মের পূর্বেই জন্মগত ত্রুটি নির্ণয় ও পরিকল্পিত প্রসবের ব্যবস্থা করা।
২। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে শিশু সার্জারি সেবার সার্বিক উন্নতি ও বিশেষায়িত শিশু সার্জারি সুবিধাসম্পন্ন হাসপাতালে নিরাপদ ও দ্রুত স্থানান্তর এর ব্যবস্থা।
৩। বিশেষায়িত শিশু সার্জারি কেন্দ্রগুলোতে পেরিওপ্যারেটিভ কেয়ার (অপারেশন এর আগে ও পরের যত্ন) এর সার্বিক উন্নয়ন করা।

এইজন্য প্রয়োজন শিশু সার্জন, নবজাতক ও শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অবস্টেট্রিশিয়ান দের মধ্যে শক্তিশালী টিমওয়ার্ক এবং পরিকল্পনা। পাশাপাশি জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে প্রশিক্ষণ ও সমন্বিত যোগাযোগ জরুরি।

স্থানীয় উদ্যোগের পাশাপাশি নবজাতক ও শিশু সার্জারি কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সার্বিকভাবে শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে শিশু সার্জারিকে আর অবহেলা করা উচিৎ নয়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply