চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় ৪ দফা আন্দোলনে উত্তাল রবি: পরীক্ষা বর্জন

|

রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের ৪ দফার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা এ দিন সকাল থেকে অভিযুক্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের স্থায়ী অপসারণসহ ৪ দফা দাবীতে পরীক্ষা বর্জনপূর্বক একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভাবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হাতে লেখা প্লাকার্ড ও পোস্টার হাতে নিয়ে এ বিক্ষোভে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের মুহুর্মুহু শ্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো রবি ক্যাম্পাস। এদিকে রবির একাধিক শিক্ষক,কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে করোজোড়ে বার বার ক্ষমা চেয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় ঢাকা থেকে আসেন রবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ছাত্রনেতাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন।

এদিকে, সন্ধায় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই বৈঠক শেষ হয়। এ বৈঠক শেষে ছাত্ররা জানান,তাদের দাবি অনুযায়ী অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের স্থায়ী অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আন্দোলন চলবে।

অপর দিকে রবি কর্তৃপক্ষ বলছে তদন্ত করে বিষয়টির সন্তোষজনক সমাধান করা হবে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্ররা জানায়, গত রবিবার দুপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় ঐ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন আগে থেকে কাঁচি হাতে পরীক্ষার হলের দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা হলে
প্রবেশের সময় যাদের মাথার চুল হাতের মুঠোর মধ্যে ধরা যায়, তাদের মাথার সামনের অংশের বেশ খানিকটা চুল তিনি কাঁচি দিয়ে কেটে দেন। এভাবে একে একে ১৪ জন শিক্ষার্থীর চুল তিনি কাচি দিয়ে কেটে দেন। এরপর পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের পরিবার তুলেও গালিগালাজ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিলে বিষয়টি দেশব্যাপী ভাইরাল হয়।

এ ঘটনা নিয়ে সোমবার দিনভর দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের সাথে রবি কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। এতেও কোনো আপস মীমাংসা না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা সোমবার দুপুরে পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করার চেষ্টা করলে রবি’র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করেও পরীক্ষার হলে যেতে বাধ্য করেন।

এর প্রতিবাদ করলে সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন নাজমুল হাসান তুহিন নামের ১ম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে তার
চেম্বারে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন ও রবি থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিঃস্কারের হুমকি দেন। এতে তার শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার ভয়ে ওই ছাত্র সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শাহমখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে দরজা লাগিয়ে ৩৫টি ঘুমের বড়ি সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। সন্ধ্যা ৮টার দিকে তার সহপাঠিরা বিষয়টি টের পেয়ে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা এখনও আশংকাজনক বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাতেই রবি ক্যাম্পাসে ছুটে এসে বিক্ষোভ করে। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের এ বিক্ষোভ চলে।

পরে মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবারও বিক্ষোভ শুরু করলে রবি ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে।
নির্যাতিত শিক্ষার্থী শান্ত আহম্মেদ যমুনা টেলিভিশনকে জানান, যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তচিন্তা ও মুক্তশিক্ষার স্থান। কিন্তু রবি ক্যাম্পাস তার উল্টো। এখানে শিক্ষার্থীদের কোন ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। কথায় কথায় শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হতে হয়। ফলে ছাত্রদের বিকাশ ঘটার পরিবর্তে আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়। এক পর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায়
ভোগেন। বিশেষ করে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের এ নির্যাতনের মাত্রা এতোটাই বেড়ে গেছে যে ছাত্ররা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এক ছাত্র আত্মহত্যার চেষ্টা করে এখন হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

এ বিষয়ে রবির দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি (অতি:) ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, এ বিষয়ে ছাত্রদের সাথে কথা বলে বিষয়টির সমাধান করা হবে। এ ছাড়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে রবির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন যমুনা টেলিভিশনকে বলেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। গুটি কয়েক ছাত্র ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাকে হেনস্তা করতে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আন্দোলনের নামে রবি ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নেয়া হলে রবির শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। আপনারা জানেন আমি বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই একটি কুচক্রী মহল আমার পিছনে লেগে এই ষড়যন্ত্র করছে। যেহেতু তদন্ত হবে তখনি সত্য প্রকাশ পাবে বলে বিশ্বাস করি আমি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply