পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগে যেন দণ্ডিতের ফাঁসি কার্যকর না করা হয়, সে বিষয়ে কারা মহাপরিদর্শকের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আজ রোববার (৭ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ কুষ্টিয়ায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শুকুর আলীর রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া বাতিল করার প্রসঙ্গে এ আদেশ দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে কারা মহাপরিদর্শক ও কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মৌখিকভাবে কথা বলতে বলেছেন। আদালতে আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
উক্ত মামলা প্রসঙ্গে জানা যায়, ২০০৪ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে সাবিনা (১৩) নামে এক মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গত ১৮ আগস্ট এক আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিনজনকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন আপিল বিভাগ। ওই মামলা প্রসঙ্গে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি শুকুর আলীর আইনজীবী আদালতকে জানান, আসামির ফাঁসি কার্যকরের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং অ্যাডভান্স অর্ডারের কারণে তাকে ফাঁসি দিতে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। রিভিউ আবেদন করা হবে, সে পর্যন্ত ফাঁসি যাতে না দেওয়া হয়, এ বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ সময় আদালত জানতে চান, তিনি আবেদন করেছেন কিনা। জবাবে আইনজীবী বলেন, তিনি ওকালতনামা পাননি। ডিসির মাধ্যমে ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনো রায়ে সই হয়নি।
এরপর আদালত অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি আইজি প্রিজনসকে বলবেন পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দণ্ড কার্যকর করা না হয়। এছাড়াও আসামিপক্ষের আইনজীবীকে চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন দিতে বলেন আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে প্রতিবেশীর বাড়িতে টেলিভিশন দেখে ফেরার সময় শুকুর আলী, নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেন ১৩ বছর বয়সী শিশুকে অপহরণ করে তামাক খেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পরে হত্যা করেন। পরের দিন তার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত ৫ আসামি শুকুর, সেন্টু, আজানুর, মামুন ও কামরুলকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে আসামিরা হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক আপিল করেন। ২০১৪ সালের আদালত আপিলের শুনানি শেষে আদেশ দেন। এরপর আসামিরা আপিল বিভাগে আসেন।
ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাই কোর্ট আসামিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। হাই কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা। গত বুধবার আপিল বিভাগ শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেয়। আর অন্য তিন আসামি নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
Leave a reply