পাহাড়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলে কেনা হচ্ছে আধুনিক অস্ত্র

|

পাহাড়ে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া সশস্ত্র পাঁচ সংগঠন। তিন পার্বত্য জেলায় বছরে তাদের চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় ৪শ কোটি টাকা। চাঁদার টাকায় তারা সংগ্রহ করছে অত্যাধুনিক অস্ত্র। শান্তিচুক্তির পর গেলো ২৪ বছরে এদের সংঘাতে প্রাণ গেছে সহস্রাধিক মানুষের।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন আর যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ি দুর্গম এলাকাতেও পর্যটক কিংবা জুমের ফসল নিয়ে এখন ছুটে চলে শত শত চাঁদের গাড়ি। বান্দরবানের রুমা এবং থানচি রুটে চলাচলকারী এরকম এক গাড়ি চালক ও তার সহকারীকে বছর দুয়েক আগে অপহরণ করে মগ লিবারেশন পার্টি নামে একটি সশস্ত্র গ্রুপ। পরে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান তারা।

গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যমতে, পরিবহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জুমের ফসল এমনকি পাহাড়ে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাছে বছরে প্রায় ৪শ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে রাঙমাটি থেকে চাঁদা আদায় ১২৮ কোটি টাকা, খাগড়াছড়ি থেকে ১৩৯ কোটি টাকা, বান্দরবান থেকে ১২১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে রাঙামাটি থেকে আদায়, ১৩৭ কোটি টাকা, খাগড়াছড়ি থেকে ১১৯ কোটি টাকা, বান্দরবান থেকে ১১৭ কোটি টাকা। ২০২০ সালে রাঙামাটি থেকে ১৩৯ কোটি টাকা, খাগড়াছড়ি থেকে ১২২ কোটি টাকা, বান্দরবান থেকে ১১৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আঞ্চলিক উন্নয়নও।

মূলত ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে জেএসএসএসের বাইরে গড়ে ওঠে আরেকটি সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে এই দুই সংগঠন ভেঙে পাহাড়ে এখন সশস্ত্র কর্মকাণ্ডে তৎপর অন্তত ৫টি সংগঠন। ১৯৯৭ সালে জেএসএস ভেঙে জন্ম নেয় ইউপিডিএফ। ২০০৭ সালে ইউপিডিএফ ভেঙে হয় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক
২০১৩ সালে আবারও জেএসএস ভেঙে হয় জেএসএস সংস্কার। গেল দুই বছরে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে মগ লির্বারেশন পার্টি।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তার করতেই গ্রুপগুলো জড়িয়ে পড়ছে সংঘাতে। নিজেদের শক্তি বাড়াতে সশস্ত্র এসব গ্রুপ এখন মজুদ করছে একে ফরটি সেভেন, এম সিক্সটিনসহ অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। নিজেদের আধিপত্যের লড়াইয়ে গেলো কয়েক দশকে প্রাণ গেছে অন্তত ১২১০ জনের। নিহতদের মধ্যে বাঙালি ৪৩৯ জন ও পাহাড়ি ৭৭১ জন।

আরও পড়ুন : মার্কিন সামরিক বাহিনীতে অস্ত্র চুরি, জড়িত সেনাসদস্যরাই

গত চার বছরে ইউপিডিএফের ৪২ জন, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিকের ৫ জন, জেএসএসের ১২ জন, জেএসএস সংস্কারের ৩২ জন, বাঙালি ২ জন ও অন্যান্য ১০৫ জন হত্যার শিকার হন, অপহরণ হয় ৯০ জন। আর ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজারের বেশি অস্ত্র। জব্দ করা হয় আড়াই লাখ গোলাবারুদ।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply