কক্সবাজারে গিয়ে ছেলে হত্যার রায় শুনলেন সিনহার মা

|

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ ও তার মা নাসিমা আক্তার। ফাইল ছবি।

কক্সবাজারে উপস্থিত থেকেই ছেলে হত্যার রায় শুনেছেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মা নাসিমা আক্তার। সোমবার কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছেন আদালত। আর এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, সাগর ও রুবেলসহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন দেয়া হয়েছে। সেই সাথে এপিবিএন এর সদস্য এসআই শাহজাহান ও কনস্টেবল রাজিবসহ ৭ জনকে খালাস প্রদান করা হয়েছে। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস জানান, আমার ভাই সিনহা হত্যা মামলায় রায় শুনতে সকালে মাকে নিয়ে আমরা ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে রওনা হই। মা নিজ কানে সিনহা হত্যা মামলার রায় শুনতে চেয়েছিলেন।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বাড়ি।
রাজধানীর উত্তরায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বাড়ি

এদিকে, সিনহা হত্যার বিচার চেয়ে তাদের উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের বাসার প্রবেশপথে একটি ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এতে লেখা আছে, ‘মেজর (অব.) সিনহা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে আদালত কার্যক্রম শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয় রায় পড়া। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে আদালত আসামিদের সাজা প্রদানের কথা জানান। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সাথে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেফতার করে। সিনহা কক্সবাজারে যে রিসোর্টে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্ট থেকে তার তথ্যচিত্র নির্মাণ সহযোগী শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। শিপ্রা ও সিফাত জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় সে সময় চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। তিনটি মামলার দুটি মাদক রাখার অভিযোগে এবং একটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে।

অপরদিকে, হত্যা মামলা দায়ের করেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। ওই বছরের ৫ আগস্ট আদালতে করা ওই মামলায় তিনি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের নয় সদস্যকে আসামি করেন। সবগুলো মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৪ জনকে গ্রেফতার করে তারা। এদের মধ্যে ১১ জন পুলিশ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ও ৩ জন গ্রামবাসী। পুলিশের করা তিনটি মামলার অভিযোগের কোনো সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম।

আর হত্যা মামলায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে আসামি করে কক্সবাজার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় র‍্যাব। আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন । তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

গত বছরের ২৭ জুন প্রদীপসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। অভিযোগপত্রে থাকা ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ১২ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। আর আজ ঘোষণা হলো চাঞ্চল্যকর মামলাটির রায়।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply