সম্পত্তির ভাগ না পাওয়ায় বাবার লাশ দাফনে বাধা সন্তানদের

|

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট:


ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিউিটের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ৯০ বছর বয়সী হাজী আবু আহমেদের লাশ আটকে রেখে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারায় বসলেন সন্তানেরা। লাশের সামনে ভাই-বোনদের মধ্যে ঘটে হাতাহাতির ঘটনাও। এমনকি কল যায় ৯৯৯ নম্বরেও। পরে ফেনীর দাগনভূঞা থানার ওসি মো. হাসান ইমামের হস্তক্ষেপে ১৬ ঘণ্টা পর লাশ দাফন করা হয়। ওসির উপস্থিতিতে সম্পত্তি পাওয়ার আশায় লিখিত বায়না পত্র হলে লাশ দাফনে বাধা তুলে নেয় আবু আহমেদের সন্তানরা।

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এমন ঘটনা ঘটে। মৃতের সন্তানদের

জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দাগনভূঞা পৌর শহরের আমানউল্যাহপুর গ্রামের হাসপাতাল রোডস্থ জননী ম্যানশনে বাধর্ক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন সাবেক এ শিক্ষক। দাগনভূঞা উপজেলা শহরে বসবাস করতেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দাগনভূঞা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মহিউদ্দিন আহমেদ জুয়েল জানান, দাগনভূঞা উপজেলা শহরে ৩০ শতাংশ ও বসুরহাটে ৬২ শতাংশ জায়গা দ্বিতীয় স্ত্রী ও ৩ ছেলেকে দিয়ে দেন তিনি। এরমধ্যে কিছু সম্পত্তি শিক্ষক নিজে দিয়েছেন আর কিছু সম্পত্তি তার সন্তানেরা কৌশলে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ওই শিক্ষকের ১৫০ থেকে ২০০ শতক সম্পত্তি রয়েছে।

পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবু আহমেদের ৭ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে ১ম ঘরের ছেলে নুর উদ্দিন নেছার, সোহেল, কাউছার, হেলাল উদ্দিন ও দুই মেয়ে জেসমিন আক্তার এবং গোলশান আরাকে সকল সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে আবু আহমেদ তার ২য় স্ত্রী ফিরোজা বেগম, ছেলে ইমাম উদ্দীন পারভেজ, এনায়েত উল্যাহ
ফরহাদ ও নেয়ামত উল্যাহকে সমুদয় সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করে দেন। এতে প্রথম ঘরের সন্তানরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা সম্পত্তির বিষয়ে সামাধান না হওয়া পর্যন্ত তাদের পিতা আবু আহমেদের লাশ দাফনে বাধা প্রদান করেন। এসময় ভাই-বোনদের মাঝে সম্পত্তি নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

ওইসময় ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯ এ কল করলে সেখান থেকে দাগনভূঞা থানাকে অবহিত করে। খবর পেয়ে দাগনভূঞা থানার ওসি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পরে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও নিহতের সন্তানদের নিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাসান ইমাম বৈঠকে বসে সম্পত্তির বিষয়টি পরবর্তীতে সমাধান করার আশ্বাস দেন। তাদের মধ্যে লিখিত স্ট্যাম্প হয়। প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর পারিবারিক কবরস্থানে আবু আহমেদকে দাফন করা হয়।

আবু আহমেদের সন্তানদের লিখিত অঙ্গীকারনামায় যা আছে:

এই মর্মে আমরা সকল ওয়ারিশগণ অঙ্গীকার করিতেছি যে আমরা মৃত আবু আহমেদেও ওয়ারিশগণ সকলে একমত পোষণ করেতেছি যে আমাদের পিতা বিগত ১৬-০২-২২ তারিখ সময় ১টা ৩০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। আমাদের পিতার মৃত্যুকালীন রেখে যাওয়া সকল সমুদয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি আমার বাবা জীবদ্দশায় বণ্টন করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাবার লাশ দাফনের পর স্থানীয় কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সহযোগিতায় ১ সপ্তাহের পর সমান হিস্যা হারে ভাগ বণ্টনের মাধ্যমে বাটোয়ারা করিয়া নিব। এই মর্মে আমরা সকল ওয়ারিশগণ অঙ্গীকার করিতেছি যে, বাবার লাশ দাফনে আমাদের কোনো ওয়ারিশদের আপত্তি রহিল না। আমরা সকলে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করিলাম।

থানার অফিসার ইনচার্জ হাসান ইমাম জানান, লাশ দাফনে বাধা দেয়ার বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করি। সম্পত্তির বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে সকলকে নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে না গেলে হয়তো লাশ ওইভাবেই পড়ে থাকতো, বিষয়টি দুঃখজনক।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply