সীমিত সামর্থ্য নিয়েও প্রবল শক্তিধর রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থানে থেকে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কি। নিজে নিরাপদে দেশ ছাড়ার প্রস্তাব পেলেও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ তিনি। বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্টের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার মানসিকতায় আত্মবিশ্বাস বাড়ছে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের। অথচ মাত্র তিন বছর আগেও রাজনীতিবিদ হিসেবে কোনো পরিচিতি ছিল না ৪৪ বছর বয়সী জেলেনস্কির। দেশের কঠিন সময়ে যে মানুষটি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, মাত্র কয়েক বছর আগেও তার পরিচয় ছিল স্রেফ একজন কমেডিয়ান। ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল’ নামক টিভি শোতে প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান জেলেনস্কি। কে জানতো, তাকে সত্যিকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেই কাঁধে নিতে হবে গুরুদায়িত্ব!
সামরিক শক্তির বিবেচনায় রাশিয়ার সামনে নিতান্তই যেন লিলিপুট ইউক্রেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কির চালচলন, অভিব্যক্তিতে তার প্রকাশ নেই। পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সমর্থন না পেয়েও হাল ছাড়েননি এই রাষ্ট্রপ্রধান।
২০১৯ এর জাতীয় নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই দৃশ্যপটে আসেন জেলেনস্কি। দুর্নীতি আর নানা বিভক্তিতে বিরক্ত ভোটারদের মন জয় করে নেন তার তীক্ষ্ণ রসবোধ দিয়ে। যে কারণে অনভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জেলেনস্কির ওপরই ভরসা রাখে ইউক্রেনের সাড়ে চার কোটি মানুষ। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে লড়াইয়ে ৭৩ শতাংশের বেশি ভোট নিয়ে জয় পান তিনি।
জেলেনস্কির নির্বাচনী অঙ্গীকারই ছিলো রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। পরাশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান সাহসী হলেও মস্কোকে ক্ষুব্ধ করা নিয়ে ইউক্রেনের অনেকে আবার বিরক্ত প্রেসিডেন্টের ওপর। আর মস্কোর ক্ষোভ তো গোপন নয় তার বিরুদ্ধে। এমনকি মার্কিন গোয়েন্দাদেরও ধারণা, আপাতত জেলেনস্কিকে উৎখাত করাই রাশিয়ার লক্ষ্য।
আর জেলেনস্কিও জানেন, শত্রুদের মূল লক্ষ্য তিনি এবং তার পরিবার। ইউক্রেন রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, তারা আমাকে মেরে রাজনৈতিকভাবে ইউক্রেনকে ধ্বংস করে দিতে চায়।
ইহুদি বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নিলেও মস্কোর চোখে জেলেনস্কি একজন নব্য-নাৎসী। তাকে মাদকাসক্ত বলেও অভিহিত করছে রাশিয়া। যদিও লড়াই শুরুর পর ইউক্রেনবাসীর কাছে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন জেলেনস্কি।
নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে কেবল দেশে নয়, বিশ্বজুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। নিশ্চিত মৃত্যুর ঝুকি থাকলেও রাজধানীতে থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে চান তিনি। ভার্চুয়াল বৈঠকে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে একরকম বিদায়ও নিয়ে রেখেছেন।
/এডব্লিউ
Leave a reply