সিজার করাতে গিয়ে প্রসূতির মূত্রথলি কাটলেন গাইনি চিকিৎসক!

|

ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরে গাইনী চিকিৎসক ফাতেমা রওশন জাহানের বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারের (সিজার) সময় প্রসূতির (২৪) মূত্রথলি ও রক্ত সঞ্চালনের কয়েকটি শিরা কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। জরায়ুর পরিবর্তে কাটা মূত্রথলি দিয়ে নবজাতককে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা করা হয়। এতে নবজাতকের মাথায় জখম হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মা ও শিশুকে নোয়াখালী প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনায় বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে প্রসূতির স্বামী ওমান প্রবাসী আশেক এলাহী সবুজ জেলা সিভিল সার্জন ও চন্দ্রগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে চিকিৎসক চিকিৎসক রওশন জাহান ও অপারেশন থিয়েটার ইনচার্জ বিলকিছ আক্তার নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

অভিযোগে বলা হয়, ২৩ এপ্রিল প্রসব বেদনা উঠলে স্ত্রীকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন সবুজ। প্রথম থেকেই স্বাভাবিক প্রসবের (নরমাল ডেলিভারি) জন্য চেষ্টা করতে চিকিৎসকদের বলছিলেন ভূক্তভোগীর পরিবার। কিন্তু চিকিৎসক রওশন ও বিলকিস কৌশলে ভয় দেখিয়ে সিজারের জন্য চাপ দেন। চাপের মুখে উপায় না পেয়ে সবুজসহ পরিবারের লোকজন রাজি হয়।

ভূক্তভোগীর স্বামী আশেক এলাহী সবুজ জানিয়েছেন, সিজারের সময় তার স্ত্রীর মূত্রথলি কাটা যায়। তাৎক্ষণিক রক্ত বন্ধ না করে চিকিৎসক মূত্রথলি আরও কাটেন। এ সময় রক্ত সঞ্চালনের কয়েকটি শিরা কাটা যায়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরমধ্যে নবজাতককে জরায়ুর পরিবর্তে মূত্রথলি দিয়ে জোরপূর্বক বের করার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি দেখে অচেতন করার চিকিৎসক হুমায়ুন কবির বারণ করে। পরে তার সহযোগীতায় সিজার সম্পন্ন হয়। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রসূতি ও জোরপূর্বক প্রসবে নবজাতকের মাথায় জখম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালটির দুই দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানিয়েছেন, সিজার করাতে পারলেও রওশন জাহানের পর্যাপ্ত ডিগ্রি নেই। শিরাসহ মূত্রথলি কেটে ফেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রসূতির। এর দায় এড়াতে স্থানান্তর (রেফার) নোটে তিনি রোগীর সমস্যার কথা লিখেছেন, মূলত রোগীর কোনো সমস্যা ছিল না।

অ্যানেস্থেশিয়া চিকিৎসক হুমায়ুন কবির বলেন, জরায়ু ও মূত্রথলি পাশাপাশি। প্রসবের চাপ বেশি ছিল। কিন্তু জরায়ুর মুখ ছোট থাকায় নবজাতক আটকে যায়। এ সময় চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করতে গেলে মূত্রথলি কাটা যায়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এটা দেখতে পেয়েই আমি সিজার করতে সহযোগীতা করেছি।

চিকিৎসক ফাতেমা রওশন জাহান বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সত্য নয়। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে দেখা করে কথা বলবো। তবে প্রশাসনিক দফতরে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানিয়েছেন। প্রসূতি ও নবজাতক সুস্থ আছে বলে আমি জানতে পেরেছি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

বক্তব্য জানতে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. মহিউদ্দিনের ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, ভূক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগটি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply