ক্ষমতাসীনদের নমনীয় অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা?

|

আলমগীর স্বপন:

রাজনীতিতে দীর্ঘদিন মুখ দেখাদেখি নেই শীর্ষ দুই দল, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির। মাঠে নামলে ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারমুখী অবস্থানের অভিযোগ করছে প্রধান বিরোধী দলটি। এ অবস্থায় বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বাধা না দেয়ার প্রতিশ্রুতিসহ দলটিকে নির্বাচনে আনতে প্রয়োজনে তাদের সাথে সংলাপে বসতে চায় ক্ষমতাসীন দল। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীনদের এই নমনীয় অবস্থানকে কৌশল বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও বিরোধী দলীয় নেতারা। তাদের মতে, সরকার যদি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী পক্ষের সাথে আলোচনা করতে চায় তবে তা ফলপ্রসূ হবে না। দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় কঠিন বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তবে বিরোধীদের নির্বাচনে আনতে ক্ষমতাসীন দলের এমন নমনীয়তার কারণ কী? বিএনপির মতো বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকরাও বিষয়টিকে দেখছেন কৌশল হিসেবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলছেন, বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলে তা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে না, তাই সরকার চায়, কোনোভাবে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নির্বাচনটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। তারা মূলত দেখানোর জন্য বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় বলেও মন্তব্য করেন এই রাজনীতিবিদ।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সও আওয়ামী লীগের সুষ্ঠু নির্বাচন ও নির্বিঘ্নে সভা-সমাবেশ করতে দেয়ার প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করছেন না। বর্তমান সরকারের অধীনে, এমনকি এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বিএনপিকে একটি ইফতার মাহফিলও করতে দেয় না, তারা আমাদের নির্বাচনী জনসভা করতে দেবে, তা কীভাবে বিশ্বাস করা সম্ভব! ফলে আওয়ামী লীগের নমনীয়তাকে তিনি ইতিবাচকভাবে দেখছেন না।

একইরকম ধারণা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিরও। আওয়ামী লীগের এই নমনীয়তাকে তিনিও দেখছেন কৌশল হিসেবে। জোনায়েদ সাকি বলেন, তাদের অধীনে নির্বাচনের জন্য সবার সম্মতি আদায় করতে এটি তাদের একটি কৌশল। গত নির্বাচনে সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলেও একটি অস্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। গতবারের ওই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক নির্বাচন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

একই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছেন, মূলত আওয়ামী লীগকে আর বিএনপি বিশ্বাস করে না। এর আগের নির্বাচনের কথা তুলে তিনি বলেন, সেবার বিএনপি তাদের বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছে। এখন বিএনপি বলছে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব না থাকলে আলোচনা বা সংলাপের আহ্বান কোনো ফল বয়ে আনবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যদিও আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ আশ্বাসে ভরসা নেই বিরোধীদের। সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স স্পষ্ট করেই বলছেন, সরকারের প্রভাবে থেকে নির্বাচন কমিশনও স্বাধীনভাবে কাজ করবে না। তাই এই নির্বাচন নিয়ে আশা দেখছেন না তিনি। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করছেন, সংবিধান সংশোধন করে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য করার মতো চাপ প্রয়োগের সক্ষমতা বিএনপির নেই। তবে নিতান্তই তারা যদি নির্বাচন করতে চায়, তবে বড়জোর আওয়ামী লীগের সাথে ‘নেপথ্যে’ তারা দর কষাকষি করে নিতে পারে, যে তাদের কয়টা সিট দেয়া হবে।

জোনায়েদ সাকি অবশ্য আওয়ামী লীগের সাথে দর কষাকষির জন্যও প্রস্তুত নন। তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, তা তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না। এই মুহূর্তে সব বিরোধী শক্তিরই লক্ষ্য, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য লড়াই করা।

পুরো বিষয় নিয়ে সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলছেন, ঈদের সময়কার সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও বিএনপির নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করতে বেগ পেতে হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সেসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করতে পারেননি। আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের প্রতিশ্রুতি তারা বিশ্বাস করবে না, তা বলাই যায়। ফলে আওয়ামী লীগের নমনীয়তাকে বিরোধীরা কৌশল হিসেবে দেখবে বলে মনে করছেন তিনিও।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply