অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় ৩৮টি বিলাসবহুল পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলো পাকিস্তান

|

৩৮টি বিলাসবহুল পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলো পাকিস্তান।

করোনা মহামারি আর ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় ‘জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা’র আওতায় ৩৮টি বিলাসবহুল পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পাকিস্তান সরকার। বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ঐতিহাসিক দর পতনের দিন অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিলো দেশটির সরকার। এ দিন সকালে ডলারের বিপরীতে রুপির মান ‍ছিল ১৯৮ দশমিক ৩৯; কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা ২০০ পাকিস্তানি রুপি ছাড়িয়ে যায়। খবর ডনের।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব।

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে দিনরাত কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। নতুন পরিকল্পনার আওতায় সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞার ফলে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে এখন জরুরি পরিস্থিতি চলছে। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মেনে পাকিস্তানিদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।আমদানির বিপরীতে ইতোমধ্যে যেসব ঋণপত্র উন্মুক্ত অথবা মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে, সেগুলো আমদানি করা যাবে। তবে নতুন করে আর কোনো আমদানি আদেশ নেয়া যাবে না। সত্যি বলতে, আমাদের আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। সরকার এখন রফতানির দিকে মনোনিবেশ করছে। সরকারের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতায় স্থানীয় শিল্পের উন্নতি এবং প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

মরিয়ম আওরঙ্গজেব আরও বলেন, নতুন এ পদক্ষেপ চলমান নগদ বৈদেশিক মূদ্রার ঘাটতির ওপর প্রভাব ফেলবে। এই পদক্ষেপ জরুরি অর্থনৈতিক পরিকল্পনার আওতায় নেয়া হয়েছে। জনগণের ওপর জ্বালানির দামের প্রভাব কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে শুক্রবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।

তার ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই এক টুইট বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ লেখেন, গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাবে। আমরা মিতব্যয়িতার চর্চা করবো এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিদের এ প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে। যাতে কম সুবিধাপ্রাপ্তদের পিটিআই সরকারের চাপিয়ে দেয়া বোঝা বহন করতে না হয়।

যেসব পণ্যের আমদানিতে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা- গাড়ি, মোবাইল ফোন, গৃহস্থলি আসবাবপত্র, ফলমূল এবং শুকনো ফল (আফগানিস্তান ব্যতীত), ক্রোকারি, ব্যক্তিগত অস্ত্র ও গোলাবারুদ, জুতা, ঝাড়বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাল্ব, হেডফোন ও লাউডস্পিকার, সস, দরজা জানালার ফ্রেম, ভ্রমণের ব্যাগ এবং স্যুটকেস, প্রসাধন সামগ্রী, মাছ, কার্পেট, তাজা ফল, টিস্যু পেপার, ফার্নিচার, শ্যাম্পু, মিষ্টান্ন, বিলাসবহুল তোষক ও স্লিপিং ব্যাগ, জ্যাম ও জেলি, কর্নফ্লেক্স, টয়লেট সামগ্রী, হিটার, ব্লোয়ার, সানগ্লাস, রান্নাঘরের জিনিসপত্র, সোডা পানি, হিমায়িত মাংস, জুস, পাস্তা, আইসক্রিম, সিগারেট, শেভিং পণ্য, বিলাসবহুল চামড়ার পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, সেলুনের পণ্যসামগ্রী ও চকোলেট।

প্রসঙ্গত, ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির ঐতিহাসিক পতন ঘটেছে। দেশটির মুদ্রাবাজারে ১ ডলার কিনতে এখন খরচ করতে হচ্ছে ২০০ রুপি। জিও নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে ডলারের বিপরীতে রুপির মান ‍ছিল ১৯৮ দশমিক ৩৯। কিন্তু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই মান ২০০ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর গত ৭৫ বছরে মিজেদের মূদ্রার এমন দরপতন দেখেননি পাকিস্তানিরা।

/এসএইচ




সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply