গুলিতে মৃত্যু হলেও সনদে লেখা নিউমোনিয়া; ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে বিতর্ক

|

নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হলেও ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে নিউমোনিয়া কিংবা আঘাতজনিত কারণ। ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী অভিযানে যেসব সন্দেহভাজনের প্রাণ গেছে তাদের অনেকেরই ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য। অথচ পরবর্তীকালে সেসব দেহাবশেষ থেকে গুলিও উদ্ধার করা হয়েছে। রয়টার্সের খবর বলছে, ২০১৬ সাল থেকে চলা মাদকবিরোধী অভিযানে ফিলিপাইনে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১২ হাজার মানুষের।

ম্যানিলার একটি কবরস্থান থেকে স্বামীর দেহাবশেষ বের করার পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন অরোরা ব্লাস। ২০১৬ সালে গুলি করে হত্যা করা হয় তার স্বামীকে। অথচ ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় নিউমোনিয়া।

এই নারী বলেন, যখন আমার স্বামীর মরদেহ আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হলো, তখনই দেখি মাথায় অনেক বড় একটা গর্ত। আমি বুঝতে পারি সেটা গুলির ক্ষত। কিন্তু ওই গর্তের চারপাশ পরিষ্কার করে রাখা হয়েছিল। আর যে ডেথ সার্টিফিকেট দেয়া হয়েছিল তাতে লেখা ছিলো মৃত্যুর কারণ নিউমোনিয়া। স্ত্রী হিসেবে এরচেয়ে কষ্টের আর কিই বা হতে পারে!

২০১৬ সালের জুনে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন রদ্রিগো দুতের্তে। অভিযোগ ওঠে, অভিযানের নামে বিরোধী রাজনীতিক এবং সন্দেহভাজনদের তুলে নেয়ার পর হত্যা করে নিরাপত্তা বাহিনী। এর মধ্যে অনেকেই এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। যাদের মরদেহ মিলেছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আঘাত কিংবা নিউমোনিয়া। ২০১৬ সাল থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত এমন ১০৭টি ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে।

দেশটির ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট র‍্যাকুল ফরচুন বলছেন, পরীক্ষা নিরিক্ষার পর আমরা দেখেছি অনেক মৃত ব্যক্তির হাড়ে আঘাত রয়েছে। গুলিবিদ্ধ হলে যে ধরনের চিড় ধরে, ঠিক সেরকমই আঘাত রয়েছে হাড়ে। কিন্তু ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে নিউমোনিয়ার মতো অসুখ।

স্থান সংকটে ম্যানিলায় সর্বোচ্চ ৫ বছরের জন্য সংরক্ষণ করা যায় কবর। এরপর নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বর্ধিত করা যায় মেয়াদ। তবে দারিদ্র্যের কারণে অধিকাংশ পরিবারই দেহাবশেষ দাহ করতে বাধ্য হয়। ৫ বছর আগে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত এমন অনেক দেহাবশেষ পরীক্ষার পর বেরিয়ে আসছে গা শিউরে ওঠা তথ্য।

ফিলিপিন ধর্মীয় নেতা ফ্ল্যাভি ভিলানুয়েভা বলছেন, এসব দেহাবশেষের ময়নাতদন্তের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে কিভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানো হয়েছিল সেসব কিছুই একে একে উঠে আসছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বলছে, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২ থেকে ৩০ হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। যদিও সরকারি হিসেবে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা দেখানো হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ২শ।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply