অফিসের বাথরুম থেকে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

অফিসের বাথরুম থেকে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ পরিচালক ওয়ালিউর রহমান আকন্দের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হলেও প্রকৃত বিষয়টি ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের পর জানা যাবে। তিনি পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে পুলিশের ধারণা।

সংশ্লিষ্ট অফিস, পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১ মার্চ নওগাঁর হাস-মুরগীর অফিস থেকে পদোন্নতি পেয়ে রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিসে বিভাগীয় পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ওয়ালিউর রহমান আকন্দ। এর আগেও তিনি রংপুর প্রাণিসম্পদ অফিসে ডিডি হিসেবে চাকরি করেছেন। তার বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের বনগ্রাম ইউনিয়নের বলদাবাড়ি গ্রামে। তিনি অফিসের তিন তলায় একটি রুমে বসবাস করতেন। কোথাও ভাড়া বাসায় থাকতেন না। তার স্ত্রী এবং কন্যা ও পুত্র থাকেন বগুড়ায় নিজ বাড়িতে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন যমুনা টেলিভিশনকে জানান, সকাল ১১ টার দিকে আমরা খবর পাই। সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পোশাকি, সাদা পোশাকি, সিআইডিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আসি। প্রাথমিকভাবে আমরা অফিসের তিন তলার রুমের বাথরুমে সাওয়ারের সাথে গামছা পেঁচানো অবস্থায় তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য এবং আলামত জব্দ করি। সিআইডির ক্রাইম সিন দিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট এবং আলামত সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এরপর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, তিনি অফিসের ওই রুমেই থাকতেন। সকালে সাড়ে ১০ টার দিকে অফিসে না যাওয়ায় তার ড্রাইভার আফতাব হোসেন এবং পিয়ন বদিউজ্জামান তাকে ডাকতে গিয়ে ওই অবস্থায় দেখতে পান। এসময় তিন তলার কলাপসিবল গেট বন্ধ থাকলেও তালা দেয়া ছিল না। এমনকি তার রুমের দরজাতেও সিটকিনি দেয়া ছিল না। বিষয়টি আমরা নিবিড়ভাবে তদন্ত করছি। ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু। তবে আত্মহত্যার আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু কি কারণে তিনি তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন তা এখনও জানা যায় নি।

প্রত্যক্ষদর্শী গাড়ি চালক আবুবকর সিদ্দিক জানান, সোমবার (২০ জুন) সারাদিনই অফিস করেছেন তিনি। কোথাও যান নি তিনি। বিকেল সাড়ে ৫ টায় আমি স্যারকে বলি গাড়ি বের করবো কিনা। তখন তিনি বলেন, গাড়ি গ্যারেজে রাখো। এই বলে স্যার তিন তলায় তার থাকার রুমে চলে যান এবং আমি বাড়ি যাই। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে স্যার অফিস কক্ষে না আসলে আমাকে অফিসের বড় বাবুরা বলেন দ্যাখো তো স্যার কই। নাই কেন। আমি পিয়ন বদি ভাই সহ তিন তলায় গিয়ে দেখি কলাপসিবল গেট লাগানো কিন্তু তাতে তালা লাগানো নাই। আমরা খুলে গিয়ে স্যারের রুমের দরজার সামনে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। তখন ডাকাডাকি করি। কিন্তু কোনো সাড়া পাই না। ৫-৭ মিনিট পর আবার ডাকাডাকি করি। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় দরজার নকে হাত দিতেই দরজা খুলে যায়। এরপর দেখি বিছানায় মশারি দেয়া। কিন্তু উনি নেই। বাথরুমের দরজা খোলা। জুতা বাইরে। একটু উঁকি দিতেই দেখি স্যার গামছা দিয়ে শাওয়ারের সাথে ঝুলে আছে। জিহ্বা বের হওয়া।

পিয়ন বদিউজ্জামান বলেন, ড্রাইভারসহ লাশ দেখেই আমরা নিচে এসে অফিসারকে জানাই। তারা পুলিশকে খবর দেন। স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। সব সময় আমাদের সাথে হাসিখুশি কথা বলতেন।

ওই ভবনের তৃতীয় তলায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অফিস। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, সোমবার অফিসে অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে। উনাকে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। বুধবার মিটিং করার কথা। সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। উনি অফিসের ওপরেই থাকতেন। স্যার সাধারণত ৯ টার মধ্যে অফিসে আসেন। কিন্তু সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত অফিসে না আসায় আমি পিয়ন এবং ড্রাইভারকে স্যারের রুমে যেতে বলি। তারা গিয়ে এই ঘটনা দেখে আমাকে জানালে পুলিশে খবর দেই। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। আমরা মানতে পারছি না।

খবর পেয়ে সেখানে ছুটে আসেন তার ভাই শাহজাদা। তিনি জানান, ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। ভাতিজা ভাতিজি ও ভাবিসহ বগুড়ায় বাসা করে সেখানে থাকতেন। আমি খবর পেয়ে এসে দেখি ভাই বাথরুমে ঝুলে আছে। বিষয়টি আমরা মানতে পারছি না। ভাই কেন এভাবে আত্মহত্যা করবেন বুঝতে পারছি না।

এদিকে এ ঘটনায় পুরো প্রাণিসম্পদ বিভাগে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রংপুর বিভাগের বিভিন্ন অফিস থেকে কর্মকর্তারা ছুটে এসেছেন। তারা বিষয়টি কোনোভাবেই মানতে পারছেন না।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply