স্টাফ করেসপনডেন্ট, নরসিংদী:
নরসিংদী মডেল থানায় প্রতিবেশী এক পরিবারের বিরুদ্ধে মারধর ও শ্লীলতাহানির লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন নজরপুরের এক গৃহবধূ। রাতে বাড়ি ফেরার পর ‘কেনো তিনি মামলা করতে গেলেন’ এ কারণে ঘরের টিন ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে তাকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) রাতে সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের নবীপুরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী দশ ও দুই বছর বয়সী দুই সন্তানের মা। তার স্বামী মেঘনা নদীতে মাছ ধরার জেলে ও শেখেরচর-বাবুরহাটে হাটের দিনে কুলি হিসেবে কাজ করেন বলে জানা গেছে।
ঘটনার সময় দুই বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে ভূক্তভোগী ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় তার স্বামী নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন অন্যদিকে তার দশ বছর বয়সী সন্তান মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন। বর্তমানে ভূক্তভোগী নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ধর্ষণে দুজন ব্যক্তি জড়িত বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীর। তাদের একজনের নাম বাদল মিয়া (৫০), যিনি আগে মাদকের ব্যবসা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলায় আসামি হওয়ার পর তিনি মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন। তবে মাদকের ব্যবসা ছেড়ে দিলেও তিনি নিয়মিত মাদকসেবী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। অভিযুক্ত অন্য ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি ভূক্তভোগী।
নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগীর অভিযোগ, মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিকেল ৪টার দিকে আমার স্বামী কাজের সূত্রে বাড়ির বাইরে ছিলেন। এ সময় প্রতিবেশী বাদল মিয়ার পরিবারের দুই নারী সদস্য আমার ঘরের ঠিক সামনে এক বালতি পচা মাছ এনে রাখে। আমি মাছগুলো সরানোর কথা বললে তারা আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। এ সময় তারা আমার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে তাদের ডাকে বাদল মিয়া সেখানে এসে আমার পরনের কাপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানি ও মারধর করেন। পরে তারা আমার সন্তানকে পানিতে ফেলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ সময় আমি অচেতন হয়ে যাই। পরে আমার স্বামী বাড়িতে এসে আমাকে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে কিছুটা সুস্থ হই।
তিনি আরও বলেন, এরপরই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নরসিংদী মডেল থানায় যাই মামলা করতে এবং বাদল মিয়াসহ তার পরিবারের ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে থানা থেকে রাতে বাড়ি ফিরি। এরপরই আমার স্বামী আবার নদীতে মাছ ধরতে চলে যান। আমিও দুই বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। থানায় মামলা করতে গিয়েছি এই খবর জানতে পেরে রাত ২টার দিকে বাদল মিয়া আরও একজনকে সঙ্গে নিয়ে আমার ঘরের টিন ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা আমাকে ব্যাপক মারধর করে। পরে একজন আমাকে ধরে রাখে এবং অন্যজন ধর্ষণ করে। এভাবে দুজনই ধর্ষণ করার পর তারা আমাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে তারা বলে যায় যে, এই ঘটনা যদি কাউকে জানাস তাহলে তোর ছেলেকে মেরে ফেলবো।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লোপা চৌধুরী জানান, ভুক্তভোগীকে আমাদের হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুতই তার ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হবে।
জানতে চাইলে ওই গৃহবধূর স্বামী জানান, আমি নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। মামলা করতে যাওয়ায় আমার অনুপস্থিতিতে ঘরের টিন ভেঙে দুজন মিলে আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। তাদের একজন বাদল মিয়া, অন্যজনকে চেনা যায়নি। আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের বিচার চাই আমি।
নরসিংদী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, গতকাল বিকেলে শ্লীলতাহানী ও মারধরের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ আমাদের কাছে দেয়া হয়েছিল। তবে মামলা করতে আসায় গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের কোনো ঘটনা আমার জানা নাই। এই বিষয়ে আমরা কোনো লিখিত অভিযোগও পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
/এসএইচ
Leave a reply