রাজীবের মৃত্যু তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি হাইকোর্টের

|

দুই বাসের রেষারেষিতে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীবের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

কমিটিতে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ও নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন রয়েছেন। এছাড়া মোয়াজ্জেম হোসেনের মনোনীত আরেকজন সদস্যকে রাখতে বলা হয়েছে।

আপিল বিভাগের নির্দেশে বুধবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই কমিটি গঠন করেন।

এসময় আদালতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দু কুমার রায়। পরে তিনি আদেশের বিষয়টি সংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, আদেশ অনুযায়ী, রাজীবের মৃত্যুর জন্য দুই বাস কর্তৃপক্ষের দায় নির্ধারণ ও দায়ীদের ক্ষতিপূরণ নিরূপণে কাজ করবে হাইকোর্ট গঠিত কমিটি।

আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন হাইকোর্টে। পরে ৪ জুলাই এ বিষয়ে আদেশ দেবেন আদালত বলে উল্লেখ করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।

গত ৮ মে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের মালিককে নির্দেশ দেন।

এরমধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ একমাসের মধ্যে দিতে বলা হয় দুই বাস কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু বিআরটিসি ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ১০ মে আপিল আবেদন করে।

১৩ মে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে আবেদনটি ১৭ মে শুনানির জন্য পাঠান।

এরপর ২২ মে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ দুই বাস কর্তৃপক্ষের মধ্যে কারা দায়ী ও ক্ষতিপূরণ নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনে হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন।

পরে ওই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে হাইকোর্ট রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেবেন বলেও জানান আপিল বিভাগ।

পাশাপাশি রাজীবের দুই ভাইকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ও স্বজন পরিবহনের মালিককে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত রাখেন আপিল বিভাগ।

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকায় দুই বাসের চাপায় হাত কাটা পড়ে কলেজ ছাত্র রাজীবের। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

গত ৪ এপ্রিল রাজীবের পরিবারকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।

এ রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব। পরে রাজীবের মৃত্যুর বিষয়টি আদালতকে জানালে আদালত রাজীবের দুই ভাইকে ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, কৈশোরে বাবা-মাকে হারান রাজীব। এর পর ছোট দুই ভাইকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়েন তিনি। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার টাইপ করে তিনি নিজের এবং ছোট দুই এতিম ভাইয়ের খরচ চালাতেন।

রাজীবের ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহ তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। তারা দুজনেই পবিত্র কুরআনের হাফেজ। একমাত্র বড় ভাই রাজীবকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে এই দুই শিশু।
80Shares


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply