বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের দায় অস্বীকার করছে রাশিয়া। রোববার (২৪ জুলাই) মিসর সফরকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানালেন, পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধ নিষেধাজ্ঞার জন্যেই ভুগছে গোটা বিশ্ব। তার অভিযোগ, ইউক্রেনকে রক্ষা মূল মাথাব্যাথা নয়। বরং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর লক্ষ্য। কৃষ্ণ সাগরের শস্যবাহী জাহাজগুলোতে অস্ত্র বহন করা হচ্ছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইউক্রেনের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করায় রাশিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ গোটা বিশ্ব। অবরোধ-নিষেধাজ্ঞার কারণে সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ছে সেই ক্ষোভের পরিসর। তা প্রশমনেই আফ্রিকার দেশগুলোয় সফর করছেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। মিসরে কূটনৈতিক সফরকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাফ মন্তব্য করেন, বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের জন্য দায়ী পশ্চিমারা রাশিয়া নয়। অঞ্চলটিতে প্রভাব খাটানোর জন্যেই রুশ বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। জেনে-বুঝে দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে যুদ্ধ।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের জন্য রাশিয়া নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্ব দায়ী। সবার সামনেই স্পষ্ট, তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ভুক্তভোগী বাদবাকিরা। এই অঞ্চলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমারা। রাশিয়ার ওপর দেয়া অবরোধ থেকেই উপসংহারে পৌঁছানো যায়। তাদের লক্ষ্য, ইউক্রেনকে রক্ষা নয় বরং গোটা বিশ্বের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া।
সের্গেই ল্যাভরভ জানান, শস্য পরিবহন ইস্যুতে সমঝোতার পরই ওডেসা বন্দরে চালানো হয়েছে হামলা। তাতে অনিশ্চয়তায় ঝুলছে সইকৃত চুক্তির ভাগ্য। সেই সংকট এড়াতে, জাহাজগুলোর ওপর রাখা হবে কঠোর নজরদারি। চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই বলেছি, মাইন অপসারণের মাধ্যমে ইউক্রেনের জাহাজ অবলীলায় কৃষ্ণ সাগরে বেরুতে পারবে। রাশিয়া-তুরস্ক ও জাতিসংঘ যৌথভাবে পণ্যবাহী জাহাজগুলোর নিরাপত্তা দেবে। তাছাড়া শস্যের আড়ালে অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। নতুবা সংঘাত কমার বদলে বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রুশ-ইউক্রেন অঞ্চলের শস্যের অন্যতম ভোক্তা মিসর। ২০১৯ সালেও তারা ওই অঞ্চল থেকে আমদানি করেছিল ৩৬ লাখ টনের ওপর গম। কিন্তু যুদ্ধের কারণে চরম সংকটের মুখোমুখি কায়রো। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমনটা জানিয়ে বলেন, কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে বরাবরই বিচক্ষণতা এবং আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেয় মিসর। রাশিয়া-ইউক্রেন উভয়পক্ষকে বলবো, সামরিক অভিযান বন্ধ করে রাজনৈতিক সমাধানে এগিয়ে আসুন। কারণ, চলমান যুদ্ধে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত মিসর। খাদ্য-জ্বালানি সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। সুতরাং যুদ্ধ বন্ধে উদ্যোগ নিন।
গত শুক্রবার, জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিতে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য রফতানির ব্যাপারে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত চুক্তি সই হয়। এরপরই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণকারী শিকাগো হুইট ফিউচার জানায়, চুক্তির খবরে বিশ্ব বাজারে গমের দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ।
/এডব্লিউ
Leave a reply