দেশের মানুষ বেহেশতে নয়, কষ্টে আছে সন্দেহ নেই: বাণিজ্যমন্ত্রী

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

বেহেশত দোজখ মরার পরে হয়, জীবিত অবস্থায় বেহেশত হয় না। এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী বলেছেন সেটা আমার বিষয় নয়। তবে আমি জানি, মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্টে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণ উল্লেখ করে ‍ধৈর্য ধরে সাশ্রয়ী হয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুরে রংপুর মহানগরীর নিজ বাসভবন ইসমান ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনদিনের সফরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি রংপুর আসেন রোববার সকাল ১০ টায়। নিজ বাসভবনে তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি। উঠে আসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্য, দেশের মানুষ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেহেশতে থাকার বিষয়টি। এ নিয়ে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেন, দেশের মানুষ বেহেশতে থাকবে কেন, মানুষের কষ্ট হচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বেহেশত বা দোজখ সেতো মৃত্যুর পরে হবে। জীবিত অবস্থায় তো আর বেহেশত হয় না। আমি জানি মানুষের কষ্ট হচ্ছে। এই সময়টা অতিক্রম করতে মানুষকে সাশ্রয়ী হতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মূল্য কমলে বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়বে। আমরা করছি প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত একটা কথাই বলছেন, এই সময়টায় সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়া দরকার। অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে আমরা দেশের মানুষকে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করব।

জ্বালানী তেলের মূল্যের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ডলারের দাম অনেক বেশি বেড়েছে। আমাদের হিসেব করতে হবে, যে কী পরিমাণ দাম কমলো, আর ডলারের মূল্যটা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাতে তেলের দামে কী প্রভাব পড়বে। আমাদের ট্যারিফ কমিশন এ নিয়ে তাদের সাথে বসবে। যেটা যৌক্তিক হয়, সেভাবে তারা হিসেব করে, তারা সিদ্ধান্ত নিবে তেলের দাম কি ধরণের কম হওয়া উচিৎ।

গণতান্ত্রিক আন্দোলন রুখে দেয়া সংক্রান্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সম্ভবত রাজনৈতিক বক্তব্য। রাজপথে মানুষ গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। যদি কোথাও কোনো অগণতান্ত্রিক কিছু আসে, সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। আর সামনে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে সামনে নামতেও পারে। কিন্তু তার জন্য কাউকে বাধা দিতে হবে, উৎখাত করা হবে, কাউকে দেখে নিবে, এর সাথে আমি সম্পৃক্ত না কিংবা এ ধরনের কথা বার্তাকে আমি যুক্তিসঙ্গত মনে করি না।

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দল তারা, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় ছিল। তাদের আচরণ গণতান্ত্রিক হওয়া উচিৎ। সেভাবেই তারা রাজপথে আন্দোলন করতে চাইলে সেটা করতে পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করবে। তাতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কোনো অবস্থায় অগণতান্ত্রিক কিংবা হিংসাত্মক কিছু করা যাবে না। তারাও ক্ষমতায় ছিলেন। তারাও নিশ্চয় গণতান্ত্রিক আচরণ করবেন। সেটা হলে দেশে গণতান্ত্রিক চর্চাটা নিশ্চিত হয়।

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হওয়ার কথাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বক্তব্য মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি জাতীয় পার্টি কেন এটা বলছে সেটা জানি না। কিন্তু সারা পৃথিবীর হিসেবে সেটা বলা হচ্ছে না। হতে পারে এটা তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য। আমরা চেষ্টা করছি ভালো থাকতে। আশেপাশের অনেক দেশ থেকে আমাদের অর্থনীতি ভালো আছে। সুতরাং বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাওয়ার কোনো স্কোপ নেই।

অবৈধভাবে টাকা পাচারের কারণে দেশের অর্থনৈতিক মন্দা হয়েছে এটা মানতে নারাজ মন্ত্রী। সাংবাদিকদের কাছে দাম বৃদ্ধির কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তিনি বলেন, দেশ থেকে যদি অবৈধভাবে টাকা পাচার হয়ে থাকে তাহলে সেটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। তবে আমাদের আজকের যে অবস্থা দেশের যেভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এটা হয়েছে। দেশ থেকে টাকা পাচার হওয়ার কারণে সেটা হয় নি।

তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়েছে। ব্রাজিলে সয়াবিনের দাম বাড়ার কারণে আমাদের দেশে সয়াবিনের দাম বেড়েছিল। এই দাম আশেপাশের দেশগুলোতেও বেড়েছে অনেক। এটা আমরা একটা বৈশ্বিক পরিস্থিতির শিকার। এটার জন্য সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। আশা করি এই দুরবস্থা কেটে যাবে।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply