আদালতের আদেশ এক মাসেও পৌঁছেনি থানায়

|

ফাইল ফটো

মাহবুবুর রহমান রিপন, সিলেট ব্যুরো

সিলেটের আদালত প্রাঙ্গনে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার মামলায় পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মালমাল ক্রোকের নির্দেশনা একমাসেরও বেশি সময়ে পৌঁছেনি সংশ্লিষ্ট থানায়।

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. মঈনুল জাকির এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের মামলার আদালতের কোন নির্দেশনা এখন পর্যন্ত থানায় আসেনি। ৩৫ দিনে আদালতের নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট থানায় না পৌঁছায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন, আদালতের নির্দেশনা এতদিনেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে না পৌঁছায় প্রমাণ করে সংশ্লিষ্টরা কতটুকু দায়িত্বহীন। পাশাপাশি এটাও খতিয়ে দেখতে হবে যে, এই আসামিরা কোন খুঁটির জোড়ে আদালতের নির্দেশনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পৌঁছতে বাধা দেয়ার শক্তি পায়। ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে দ্রুত আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবীর।

ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (ইমজা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দেবু  বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আদালত থেকে থানার দূরত্ব বেশি নয়। দিনে দিনে পৌঁছার কথা। নিশ্চয় এর পেছনে কেউ কলকাঠি নাড়ছে। আমরা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

আর মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মনির আহমদ বলেন, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আদালতের একটি নির্দেশনা এতদিনেও না পৌঁছায় মনে হচ্ছে আসামিদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশ রয়েছে। আসামিদের যোগসাজশ থাকলে পুলিশও অনেক সময় নির্দেশনা পেয়ে গোপন রাখে।

এঘটনায় মামলার বাদী যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান নিরানন্দ পাল ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এমনিতেই আদালতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ পুলিশ । এখন আবার হামলাকারীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। একজন গণমাধ্যম কর্মীর মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে সাধারণ মানুষের মামলায় কি চলছে আদালতে তা বুঝতে বাকি থাকে না।

সিলেটের কোতোয়ালী থানার জিআরও নিহার রঞ্জন জানান, ১০ জুন এসপি অফিস সিলেটে পাঠানো হয়েছে। ২৬ দিন পর কেন পাঠানো হলো  এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) আব্দুল ওয়াহাব জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এতে কারো গাফিলতির প্রমাণ পেলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। অদৃশ্য কারণে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ও তেমন গুরুত্বই দেয়নি গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠাতে। সেখানেও আরো ১১ ধরে দিন চাপা পড়ে  আছে এই গ্রেফতারী পরোয়ানাগুলো।

বৃহস্পতিবার সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মাহবুবুল আলম বলেন, জিআরও’র সাথে কথা বলেছি- খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

এর আগে চলতি বছরের ১৬ মে মামলার ৯ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৬ জুন নির্ধারিত তারিখ পর্যন্ত পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করায় ৯ আসামির মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন সিলেটের মহানগর হাকিম আদালত-১ এর বিচারক মামুনুর রহমান ছিদ্দিকী। এরআগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সিলেটের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলার প্রথম দফা চার্জশীটটি দাখিল হয়। ওই চার্জশীটে বাদ দেয়া হয় প্রধান আসামি জৈন্তাপুরের মল্লিফৌদ গ্রামের ওয়াজিদ আলী টেনাইয়ের ছেলে  উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ছাড়াও নয়াখেল গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে ফয়েজ আহমদ বাবর, আদর্শ গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে শামীম আহমদ ও খারুবিল গ্রামের আলী আহমদের ছেলে মো. হোসাইন আহমদকে।

পরবর্তীতে বাদিপক্ষের নারাজির প্রেক্ষিতে মামলাটি পূন:তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই’র পরিদর্শক লিটন চন্দ্র পাল ঘটনার মুলহোতা জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ও তার তিন সহযোগীকে বাদ দিয়ে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে দ্বিতীয় দফা চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশীট গ্রহণের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৯ জন পলাতক রয়েছেন। ৬ জুন পলাতক আসামিরা হাজির না হলে আদালত তাদের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। তারা হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত গ্রামের খাতির আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম, হরিপুর গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জুয়েল আরমান, ঘাটেরছটি গ্রামের লুৎফুর রহমান কালার ছেলে এম জেড জাহাঙ্গীর, শফিকুর রহমানের ছেলে তোফায়েল আহমদ, আলু বাগান গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে সৈয়দ রাজু, বাউরবাগ মল্লিফৌদ গ্রামের মোহাম্মদ আলী মড়ার ছেলে ফারুক আহমদ, আদর্শ গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে মনির মিয়া, লক্ষীপুর পূর্ব গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে তাজ উদ্দিন, সরুখেল পশ্চিম গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে সুলতান আহমেদ, মল্লিফৌদ বাউরবাগ গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ওরফে ইয়ারছার ছেলে শামীম আহমদ।

উল্লেখ্য, গত ২৫ জানুয়ারি সিলেটের আদালত প্রাঙ্গনে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আক্রান্তরা হচ্ছেন যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন নিরানন্দ পাল ও যুগান্তরের ফটো গ্রাফার মামুন হাসান। এ ঘটনায় নিরানন্দ পাল বাদী হয়ে লিয়াকত আলী ও ফয়েজ আহমদ বাবরকে প্রধান অভিযুক্ত করে আরও ১৫/১৬ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply