নোবেল শান্তি পুরস্কার: মনোনয়ন ও বাছাই প্রক্রিয়ার আদ্যোপান্ত

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয় নোবেল শান্তি পুরস্কারকে। সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার-২০২২’র মনোনয়নের ক্ষেত্রে কিছু খবর দৃষ্টিগোচর হয়েছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে ‘দ্য নোবেল প্রাইজ’ ওয়েবসাইটে উল্লেখিত এই পুরস্কারের ক্ষেত্রে মনোনয়নের যে প্রক্রিয়া বিবৃত রয়েছে, খবরগুলো তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এবং মনোনয়ন দেয়া ব্যক্তিবর্গের কোনো তথ্য ৫০ বছরের মধ্যে প্রকাশ না করার কথাই রয়েছে নরয়েজিয়ান নোবেল কমিটির বাধ্যবাধকতায়।

ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য মতে, নোবেল শান্তি পুরস্কার-২০২২’র জন্য মনোনীত হয়েছে ৩৪৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান; যার মধ্যে ২৫১ জন্য ব্যক্তির সাথে আছে ৯২টি প্রতিষ্ঠান। নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন ও বাছাই প্রক্রিয়া দেখে নেয়া যাক এক নজরে।

মনোনয়ন প্রক্রিয়া:

নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের দায়িত্বে থাকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। পুরস্কারের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করতে পারবে মনোয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিবর্গ। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কারটির জন্য যোগ্য মনে করলে, বিশ্বজুড়ে ৯ ধরনের ব্যক্তিই কেবল পারবেন তাদের মনোনয়ন দিতে। নোবেল ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, কেবলমাত্র এই ৯ ধরনের ব্যক্তির দেয়া মনোনয়নই বিবেচিত হবে। এই ৯টি শ্রেণি দেখে নেয়া যাক।

১। সার্বভৌম দেশের সরকারপ্রধান ও সংসদ সদস্য।

২। হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালত এবং পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশনের সদস্যবৃন্দ।

৩। জেনেভায় অবস্থিত দ্য ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ল’য়ের সদস্যবৃন্দ।

৪। দ্য ইন্টারন্যাশনাল বোর্ড অব দ্য উইমেনস ইন্টারন্যাশনাল লিগ ফর পিস অ্যান্ড ফ্রিডম’র সদস্যবৃন্দ।

৫। ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, দর্শন ও ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক, ইমিরেটাস অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপকবৃন্দ।

৬। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তি।

৭। নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ।

৮। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সাবেক ও বর্তমান সদস্যবৃন্দ, এবং

৯। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির সাবেক পরামর্শকবৃন্দ।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কেবল এই ৯টি শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমেই মনোনয়নের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে, নিজের জন্য মনোনয়ন বিবেচিত হবে না।

বাছাই প্রক্রিয়া:

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের মধ্যে থেকে বাছাইয়ের কাজটি করে থাকে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। নরওয়েজিয়ান পার্লামেন্ট এই পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি নিযুক্ত করে থাকে। নরওয়ের অসলোতে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। অন্যদিকে, পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, সাহিত্য এবং অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় সুইডেনের স্টকহোমে।

ছবি: সংগৃহীত

কয়েকধাপে চলে নোবেল পুরস্কার প্রদানের প্রক্রিয়া। সেপ্টেম্বরে মনোনয়ন গ্রহণ করা শুরু করে নোবেল কমিটি। মনোনয়ন পেশ করার সর্বশেষ তারিখ হচ্ছে ৩১ জানুয়ারি মধ্যরাত। মনোনয়নের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয় মার্চ মাস নাগাদ। জুন মাসের মধ্যে এই সংক্ষিপ্ত তালিকা যাচাইবাছাই করে পরামর্শক কমিটি। এরপর, সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয় অক্টোবরে। নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ডিসেম্বরে।

মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম কি প্রকাশ্যে জানানো হয়?

সর্বজনীন বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে, মনোনয়ন সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য অন্তত ৫০ বছরের মধ্যে প্রকাশ না করার ব্যাপারে নোবেল ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাধ্যবাধকতা জারি রয়েছে। এই বিধিনিষেধ মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং যারা মনোনীত করেন, তাদের সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

৫০ বছর তথ্য গোপন রাখার নিয়ম:

নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি কখনোই মনোয়নপ্রাপ্তের নাম গণমাধ্যম এবং মনোনয়নপ্রাপ্তের নিকট প্রকাশ করে না। তবে কোন বছরের নোবেল পুরস্কার কে পেতে যাচ্ছেন, সে সম্পর্কিত আগাম জল্পনা-কল্পনার মধ্যে কিছু নাম মাঝেমধ্যেই উঠে আসে। এর কারণ নিছকই অনুমান, কিংবা মনোনয়নের পেছনে থাকা ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দ্বারা প্রকাশিত তথ্য।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply