পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
৮ মাসের ছেলে সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার দায়ে পঞ্চগড়ে হামিদা আক্তার (২৭) নামের এক মাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত৷
পঞ্চগড় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে এ দণ্ডাদেশ দেন। একইসাথে তিনি ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম।
জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত হামিদা আক্তারের বাড়ি জেলার আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের দোজশুহ এলাকায়। তিনি ওই এলাকার হাসান আলীর মেয়ে। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ায় বাবার বাড়িতে থাকতেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলার আটোয়ারি উপজেলার দোহসুহ গ্রামের হামিদা আক্তারের সাথে বিয়ে হয় তেঁতুলিয়া উপজেলার লতিফগছ এলাকার আতারুল ইসলামের সাথে৷ বিয়ের কিছুদিন পর তাদের ঘরে এক শিশু সন্তান আসলেও পারিবারিক কলহের কারণে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়৷ পরে স্বামীর সাথে তালাকপ্রাপ্ত হয়ে আট মাসের ছেলে ইমরান হোসেনকে নিয়ে বাবার বাড়িতে যান হামিদা। সেখানে যাওয়ার চার দিন পর ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল হামিদা আক্তার ছেলে ইমরান হোসেনকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় শিশুটির চাচা মজনু হক বাদী হয়ে হামিদা আক্তার ও বাবা হাসান আলী এবং মা খোদেজা বেগম (৪৫) কে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন৷
দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিহত শিশুটির মা হামিদা আক্তারকে প্রধান অভিযুক্ত করে তিনজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এরপর একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বুধবার আদালতের এজলাসে হামিদা বানুর উপস্থিতিতে আদালত এই দণ্ডাদেশ দেন। অপর দুই আসামির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় একই আদেশে আদালত তাদের খালাস দেন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মজনু হক বলেন, আমার ভাইয়ের সাথে হামিদার বিচ্ছেদের ৪ দিন পর খবর পাই, আমার ৮ মাস বয়সী ভাতিজা ইমরান মারা গেছে। আমি আমার পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে ছুটে যাই। সেখানকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানতে পারি ইমরানকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। পরে বিষয়টি আমি থানা পুলিশকে অবগত করে মামলা করি।
আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিজের সন্তানকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি আদালতে চলমান ছিল। প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা মেলায় আদালত প্রধান আসামি হামিদা আক্তারকে ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।
/এনএএস
Leave a reply