মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার আদ্যোপান্ত

|

ছবি: সংগৃহীত

বাঙালির গর্বের দিন মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। স্যালুলয়েডের ফিতায় বহুবার ধরা দিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা। যুদ্ধের লোমহর্ষক, মর্মান্তিক ও গৌরবময় বিজয়গাঁথা নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত অনেক সিনেমা।

বাংলার শান্ত গ্রামীনজীবন। হঠাৎ সে শান্ত জীবনে শুরু হয় অশান্তি। শোনা যায় মেশিনগানের গুলির শব্দ, শ্বাপদের চিৎকার আর বুটের আওয়াজ। এভাবেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হানের নির্মিত এ তথ্যচিত্রটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অসামান্য দলিল।

তবে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’। ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। এ সিনেমার মুখ্য চরিত্র ১১ জনের ১০ জনই ছিলেন বাস্তবের মুক্তিযোদ্ধা। সিনেমাটি ১৯৭২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। সিনেমাটিতে যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে।

১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় নির্মাতা আলমগীর কবিরের প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘ধীরে বহে মেঘনা’। ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র তালিকায় অষ্টম অবস্থানে ছিল সিনেমাটি। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা তুলে ধরার পাশাপাশি শিল্পমানেও বেশ উন্নত এ সিনেমা। এ সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা সর্বপ্রথম করেছিলেন জহির রায়হান।

১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রঙিন সিনেমা ‘মেঘের অনেক রঙ’; পরিচালক হারুনুর রশীদ। সে বছর মোট পাঁচটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতে সিনেমাটি। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে সাড়া জাগানো সিনেমা নির্মান করেন হুমায়ূন আহমেদ। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় ‘আগুনের পরশমণি’। মুখ্য চরিত্রে ছিলেন বিপাশা হায়াত, আবুল হায়াত, আসাদুজ্জামান নূরের মতো তারকারা।

১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেরা সিনেমা ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’। এ সিনেমারও পরিচালক ছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস থেকে নির্মিত সিনেমাটি যশোরের এক মায়ের জীবনের সত্য ঘটনায় লেখা।

এদিকে, ২০০২ সালে নির্মিত তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’ সিনেমা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রশংসিত। অস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে মনোনীত প্রথম সিনেমা ছিল এটি। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমা ২০০৬ সালে ‘সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে একাডেমি পুরস্কার এর জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

২০১১ সালে নির্মিত ‘গেরিলা’ কারিগরি দিক থেকে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের সেরা সিনেমা। পরিচালক নাসির উদ্দিন ইউসুফ। সিনেমাটি ১০টি শাখায় জাতীয় পুরস্কার পায়। একই বছর মুক্তি পায় মোরশেদুল ইসলামের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। ১৯৭১ সালে মফস্বল শহরের কয়েকজন কিশোর কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে, তারই কিছু চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পে। এছাড়া চলতি বছর বেশ কিছু সিনেমা নির্মানাধীন রয়েছে।

বরাবরই মুক্তিযুদ্ধের খন্ডচিত্র সেলুলয়েডে উঠে এসেছে বারবার। কিন্তু পূর্নাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে এখনও তৈরি হয়নি কোনো চলচ্চিত্র। কবে নাগাদ আসবে মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্নাঙ্গ চলচ্চিত্র, সেদিকেই তাকিয়ে বর্তমান প্রজন্ম। 

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply