এইচএসসিতে ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর বিস্ময়কর ফলাফল!

|

পাবনা প্রতিনিধি:

ওরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, চোখের আলো নিভে গেছে জন্ম থেকেই। কিন্ত বয়স বাড়ার সাথে সাথে সংসার-সমাজের বোঝা হয়নি তারা। তাদের অদম্য মনোবল দিয়ে জয় করেছে সবার হৃদয়। চোখের আলো না থাকলেও অন্তরের আলোয় আলোকিত পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ১৬ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

আলোকিত মানুষ গড়ার কারখানা পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্ট থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এই ১৬ অন্ধ যুবক কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা সবাই এবারে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্রেইল পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে একজন জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন।

পাবনা সদর উপজেলার সিঙ্গা গ্রামের মানবকল্যাণ ট্রাস্টে আশ্রয় নিয়ে এই ১৬ যুবক লালিত-পালিত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ পেয়েছে। বর্তমানে তাদের মতো আরো ৭২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ওই প্রতিষ্ঠানের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া করছে।

এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জনকারী ১৬ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলো- পাবনার মনিরুল ইসলাম (জিপিএ-৫), নরসিংদী জেলার শিহাবুদ্দিন ভুইয়া (৪.৮৩), টাঙ্গাইল জেলার আবদুল্লাহ আল আমিন (৪.০৮), গোপালগঞ্জের ইখতেয়ার মৃধা (৪.০৮), জামালপুরের গোলাপ মল্লিক (৪.৬৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহাদত হোসেন (৩.৯২), পঞ্চগড় জেলার রোকনুজ্জামান (৩.৫০), দিনাজপুরের আব্দুল আজিজ (৪.২৫), কুড়িগ্রামের ইমরান হোসেন (৩.৫০), টাঙ্গাইল জেলার আবুল কালাম আজাদ (৪.১৭), রাজশাহীর মনিরুজ্জামান (৪.১৭), ময়মনসিংহ জেলার মোজাম্মেল হক (৪.৪২), নরসিন্দীর মোঃ আব্দুল্লাহ (৪.০৮), জয়পুরহাটের মোহাম্মদ আলী (৪.৮৩) এবং বরিশালের হুমায়ুন কবির (৪.২৫)।

এরা সবাই ব্রেইল পদ্ধতিতে শ্রুতি লেখকের সহায়তায় পাবনা শহীদ বুলবুল কলেজ, শহীদ এম মনসুর আলী কলেজ ও জাগির হোসেন একাডেমী কেন্দ্র থেকে এবার এইসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হোসেন জানান, এসব অন্ধ যুবক শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি দারিদ্রের নিষ্ঠুর কষাঘাতে জর্জরিত। তাই তারা সব বাধা ও প্রতিকূলতাকে জয় করে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন এই প্রতিষ্ঠানে থেকে।

তিনি বলেন, অন্ধদের লেখপড়ার জন্য প্রয়োজন ব্রেইল পদ্ধতি। অথচ দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সুযোগ নেই। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন শ্রুতি লেখকের। দরিদ্র এসব অন্ধদের শ্রুতি লেখক সম্মানী তো দুরের কথা লেখাপড়ার করার ন্যূনতম আর্থিক ব্যয় নির্বাহ করারও সক্ষমতা নেই। তারপরেও থেমে থাকেনি এসব সংগ্রামী দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর শিক্ষা জীবন।

১৬ পরীক্ষর্থীর মত আরো ৭২ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাষ্টের আশ্রয়ে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা পড়া করছেন। এদের মধ্যে ১২জন পথ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা, ৮জন ৯ম শ্রেণীতে, ১০ম শ্রেণীতে ৭জন, একাদশে ৯ জন, ২ জন এমএ সহ বিভিন্ন শ্রেণীতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে সারা দেশের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সর্বোৎকৃষ্ঠ শিক্ষালয় হিসেবে গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply