মো. সাহাবুদ্দিন: তৃণমূল থেকে বঙ্গভবনের পথে যাত্রা

|

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

দেশের ২২ তম রাষ্ট্রপতি পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সব ঠিকঠাক থাকলে তিনিই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত বলা যায়।

রাষ্ট্রপতি পদে মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মো. সাহাবুদ্দিনের নাম দাখিল করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জাতীয় সংসদে দলটির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। এছাড়া, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী না দেয়ার কথা আগেই জানিয়েছে। আর তাই, মো. আবদুল হামিদের পরবর্তী ব্যক্তি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনই বঙ্গভবনের পথে হাঁটছেন। আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতি পদে ভোট হবে। অবশ্য রাষ্ট্রপতি পদে একজন প্রার্থী হলে নির্বাচনের জন্য সংসদের সভা বা ভোটের প্রয়োজন হবে না।

১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্কপাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন। শরফুদ্দিন আনছারী ও খায়রুন্নেসা তার বাবা-মা।

১৯৬৬ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। আর ১৯৬৮ সালে পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। বিএসসি পাস করেন ১৯৭১ সালে (১৯৭২ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়)।

পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরের বছর ১৯৭৫ সালে পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মো. সাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। স্বাধীন বাংলা ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি হিসেবে পাবনায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনকারী তিনি।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় ২০ আগস্ট সামরিক আইনের সাত ধারায় আটক হয়েছিলেন তিনি। আর তখন প্রায় তিন বছর কারারুদ্ধ ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন।

কারাভোগের পর মুক্ত হয়ে মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে আইন পেশায়ও যোগ দেন। তিনি ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারাঙ্গনে বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন তিনি।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। সে সময় হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে কমিশন গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন।

২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা পালন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি অভিযোগটি মিথ্যা ও অন্তঃসারশূন্য বলে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠান। যা কানাডা কোর্টের সমর্থন পায়।

দুদকের দায়িত্ব পালন শেষে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পান দলটির দুঃসময়ের অন্যতম কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত এ নেতা। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও হয়েছেন হন। পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনেরও সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন মো. সাহাবুদ্দিন। পেশাগত জীবনে প্রথম দিকে সাংবাদিকতাও করেছেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির আজীবন সদস্য।

১৯৭২ সালের ১৬ নভেম্বর পাবনা শহরের দিলালপুরের বাসিন্দা আলী আকতারের জ্যেষ্ঠ মেয়ে ড. রেবেকা সুলতানাকে বিয়ে করেন মো. সাহাবুদ্দিন। রেবেকা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়ে যুগ্ম সচিব হিসেবে ২০০৯ সালে অবসরে যান। যিনি বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স প্রোগ্রামের অধ্যাপক। তিনি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

মো. সাহাবুদ্দিন-রেবেকা দম্পতির একমাত্র সন্তান মো. আরশাদ আদনান দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply