নিরাপত্তা পরিষদে নিস্ফল আলোচনা: মিয়ানমারের পাশেই চীন-রাশিয়া

|

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো পদক্ষেপ সমর্থন করে না চীন ও রাশিয়া। নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বিতর্কে আবারও মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছে এই দুই পরাশক্তি। কোনো সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব ছাড়াই শেষ হয় আলোচিত এ বিতর্ক। এমনকি আসেনি কোনো বিবৃতিও। তবে, রাখাইনে অবিলম্বে সামরিক তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ রাখার আহবান যুক্তরাষ্ট্রের।

প্রায় এক দশক পর, নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনার একক ইস্যু মিয়ানমার। শুরুতেই, রাখাইনে সহিংসতার তথ্য দিয়ে বিতর্কের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এখনকার যে বাস্তবতা, তাতে মানুষকে বাঁচাতে দরকার দ্রুত পদক্ষেপ। সেনা কর্মকর্তাসহ মিয়ানমারের নেতাদের প্রতি আমার আবেদন, জাতিগত বিদ্বেষ কমাতে উদ্যোগী হোন।’

অ্যান্তোনিও গুতেরেসের আশঙ্কা, সহিংসতা বন্ধ না হলে ছড়াতে পারে চরমপন্থা। পরিস্থিতির উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, কোনো শর্ত ছাড়াই ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা যেতে দিন। এবং তৃতীয়ত, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে, স্বেচ্ছায় ও সম্মানের সাথে ঘরে ফিরতে পারে, সে ব্যবস্থা করুন।’

প্রায় সোয়া দুই ঘন্টার বিতর্কে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যই। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে সবাই।

তবে, মিয়ানমারের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভক্তি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বেশিরভাগ দেশের তাগিদ— শক্ত বার্তা দিতে হবে মিয়ানমারকে।

জাতিসংঘে মার্কিন প্রতিনিধি নিকি হ্যালি বলেন, ‘একটি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠিকে নিশ্চিহ্ন করার নৃশংস তৎপরতা চলছে বার্মায়। গণতন্ত্রের জন্য বার্মার যে নেতারা লড়াই করেছেন, তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। সাজানো-গোছানো কূটনৈতিক শব্দ ব্যবহারের সময় পার হয়ে গেছে। এখনই জোরালো ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিবেচনা করতে হবে। দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বার্মার সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখার আহবান জানাচ্ছি সবার প্রতি।’

অবশ্য, ভিন্ন মত, নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য চীন ও রাশিয়ার। রাখাইনে চলমান সহিংসতার জন্য একতরফাভাবে সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের দায়ী করছে দেশ দু’টি।
জাতিসংঘে রাশিয়ার প্রতিনিধি ভাসিলি নিবেঞ্জিয়া তার বক্তব্যে বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠি এআরএসএ’র কারণেই সহিংসতার সূত্রপাত। সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে তারা। এ অবস্থায় ‘জাতিগত নিধন’ কিংবা ‘গণহত্যা’ জাতীয় শব্দ ব্যাবহারে সাবধান থাকতে হবে। নেইপিদোর ওপর চাপ দিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

চীন বেশ নির্লজ্জভাবেই মিয়ানমারকে সমর্থন জানায়। চীনের প্রতিনিধি বলেন, ‘ সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মিয়ানমার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাকে সমর্থন করি আমরা। আশা করি, খুব শিগগিরই স্থিতিশীলতা ফিরবে রাখাইনে। মনে রাখতে হবে, রাজ্যটির সমস্যা খুব জটিল, এর দ্রুত কোন সমাধান নেই। ’

মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও, রাখাইনে শান্তি ফেরানোর তাগিদ দিয়েছে সব সদস্যই।

উন্মুক্ত বিতর্কে মিয়ানমারও অংশ নেয়। দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে নিজের অবস্থানে অটল থেকে জাতিগত নিধনের অভিযোগ অস্বীকার করে।

বাংলাদেশও রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র সদস্য দেশগুলোর সামনে তুলে ধরে।

যমুনা অনলাইন: আরএএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply