টুইটার ঝড় শেষে নিষেধাজ্ঞা ছাড়াই বিবিসিতে লিনেকারের প্রত্যাবর্তন

|

গ্যারি লিনেকার। ছবি: সংগৃহীত

ইংল্যান্ড সরকারের অভিবাসন নীতিকে জার্মানির নাৎসি সরকারের সাথে তুলনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় তুলেছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ও বিবিসি উপস্থাপক গ্যারি লিনেকার। ইংলিশ গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর বিখ্যাত ফুটবল বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘ম্যাচ অফ দ্য ডে’র উপস্থাপক ও বিশ্লেষকের আসন থেকে লিনেকারকে সরিয়ে দিয়েছিল বিবিসি। এর ফলশ্রুতিতে বন্ধই হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি। এবার টুইট করা সংক্রান্ত কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রদান ছাড়াই আবারও জনপ্রিয় উপস্থাপক ও কিংবদন্তি ফুটবলার লিনেকারকে ফিরিয়ে এনেছে বিবিসি। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও গোল ডটকমের।

ছবি: সংগৃহীত

ইংল্যান্ড সরকারের আশ্রয় নীতি নিয়ে টুইট করায় ইংলিশ গণমাধ্যমের শিরোনাম জুড়ে গত দিন কয়েক ধরেই আছেন গ্যারি লিনেকার। ৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন ফলোয়ারের টুইটার অ্যাকাউন্টে কিছুদিন আগে লিনেকার জানিয়েছিলেন, যেভাবে শরণার্থীদেরকে তাড়িয়ে দিচ্ছে ইংল্যান্ড সরকার, তা এক দুর্বল সরকারের নিষ্ঠুর নীতির দিকে ইঙ্গিত করছে। শুধু তাই নয়, তিনি ইংল্যান্ড সরকারের এই নীতিকে ১৯৩০ সালে জার্মানির নাৎসি সরকারের বৈরিতার সাথেও তুলনা করেন। এরপরেই শুরু হয় তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা।

এই টুইট করার জন্য বিবিসি থেকে লিনেকারকে ক্ষমাপ্রার্থনা করার জন্য বলা হয়। এতে রাজি না হওয়ায় জনপ্রিয় ফুটবল শো ‘ম্যাচ অফ দ্য ডে’র সঞ্চালকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় লিনেকারকে। এ ঘটনার প্রতিবাদে মুহূর্তের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইংলিশ ফুটবল। বিবিসি প্রত্যক্ষ করে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ‘ওয়াকওভার’ এর ঘটনা। অনুষ্ঠান থেকে একে একে সরে দাঁড়ান ইয়ান রাইট ও অ্যালান শিয়ারারের মতো ফুটবল বিশ্লেষকরা। পেশাদার ফুটবলারদের সংগঠন পিএফএ জানায়, ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়রা বিবিসিকে কোনো সাক্ষাৎকার দেবেন না। অবস্থা এতোটাই বেগতিক হয়ে দাঁড়ায় যে, বিবিসির সাপ্তাহিক ফুটবল অনুষ্ঠান সঞ্চালনের জন্য পাওয়া যায়নি কাউকেই।

ছবি: সংগৃহীত

বাধ্য হয়েই নিজেদের অবস্থানে পরিবর্তন আনে বিবিসি। গণমাধ্যমটির ডিরেক্টর-জেনারেল টিম ডেভি ঘোষণা দেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সংক্রান্ত নীতিমালার ব্যাপারে স্বাধীনভাবে পর্যালোচনা করা হবে। তিনি বলেন, সবাই বুঝতে পেরেছে যে, বিবিসির কর্মী, সাংবাদিক, উপস্থাপক এবং দর্শক সকলের কাছেই এটি ছিল বেশ কঠিন একটি সময়। আমি এ ঘটনায় ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

লিনেকার জানিয়েছেন, এই পর্যালোচনার ব্যাপারে তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এবং, আবারও বিবিসির হয়ে ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’ অনুষ্ঠানে ফেরার ব্যাপারে তিনি মুখিয়ে আছেন। লিনেকার জানান, গত কয়েকদিন ছিল তার জন্য অনেকটাই ‘পরাবাস্তব’। অসাধারণ সমর্থন দেয়ার জন্য তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান। লিনেকার বলেন, বিশেষভাবে বিবিসির সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাবো, তারা যে ভ্রাতৃত্ব দেখিয়েছে তা অসাধারণ। ফুটবল একটি দলীয় খেলা। ঠিক তেমনভাবেই আমাকে সমর্থন জানিয়েছে সবাই।

ম্যাচ অব দ্য ডে’র তিন উপস্থাপক। ছবি: সংগৃহীত

লিনেকার আরও বলেন, বিবিসিতে ৩ দশক ধরে ফুটবলের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছি আমি। বিশ্বের সবচেয়ে নিরপেক্ষ ও সেরা প্রদর্শকদের হয়ে কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় আমি সত্যিই গর্বিত। শনিবার রাতে ‘ম্যাচ অব দ্য ডে’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে দর্শকদের সামনে আসার জন্য আমার তড় সইছে না। শেষ কথা বলি। শেষ কয়েকটি দিন অনেক কঠিন হলেও কোনোভাবেই একে যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচতে নিজ জন্মভূমি ছেড়ে অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে যাত্রা করার মতো কঠিন ঘটনার সাথে তুলনা করা যাবে না। এরকম অনেক শরণার্থীদের জন্যও সবাই যেভাবে সমর্থন দেখিয়েছে তা আমাকে একটি বার্তাই দেয়; আমরা বাস করছি একটি সহনশীল এবং সকলকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত উদার মানুষের দেশে।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply