যমুনা টিভিতে সংবাদ প্রচারের পর সেই কাউন্সিলর শিপলু গ্রেফতার, বাহিনীর বাধা দেয়ার চেষ্টা

|

প্রতীকী ছবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর:

সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে বিক্রির মামলায় এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত এবং তিনটি মামলার ওয়ারেন্টভুক্তসহ ৮ মামলার আসামি রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তাজহাট মেট্রোপলিটন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আলম শিপলুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শিপলু ও তার বাহিনীকে নিয়ে গেলো শনিবার (১ এপ্রিল) ‘ক্রাইমসিনে’ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল যমুনা টেলিভিশন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে মামলার ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়া, ভাঙচুর, মারপিট, চাঁদাবাজির অভিযোগে ওয়ারেন্ট ছিল। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর বিনোদপুর এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তিনি একটি মামলার এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ওয়ারেন্টগুলো আগেই আদালত জারি করলেও প্রক্রিয়াগতভাবে ওয়ারেন্টগুলো আমাদের কাছে না থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আদালত থেকে সেগুলো পাওয়ার পর পরই তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আটটি পুলিশ ভ্যানে করে জাকারিয়া আলম শিপলুর বিনোদপুরস্থ বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। একপর্যায়ে সেখানে নেয়া হয় সাজোয়া যান।

অভিযানের খবর পেয়ে শিপলু বাহিনীর লোকজন বাড়ির সামনে গিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে অভিযান বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এসময় অনেককে মুখে গামছা ও কাপড় বেঁধেও অবস্থান নিতে দেখা যায়। তারা যমুনা টেলিভিশনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দেয় এবং ফেসবুক লাইভে তা প্রচার করে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনাও তৈরি হয়।

এরপর রাত সাড়ে নয়টায় কাউন্সিলর শিপলু বাড়ির দোতলা থেকে নিচে নেমে আসে এবং পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছেন, সেখানে অবস্থান নেয়া অধিকাংশই টোকাই এবং শিপলু বাহিনীর সদস্য। তারা সেখানে বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পুলিশকে উত্তেজিত করারও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে।

অভিযানে বাধা দেয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা আবু মারুফ হোসেন জানান, অনেকেরই অনেক ফ্যান ফলোয়ার থাকে। কাউন্সিলর শিপলু সাহেবের লোকজন সেখানে জড়ো হয়েছিল। তবে তারা কোনো ফোর্স করেনি।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত শনিবার যমুনা টেলিভিশনের ‘ক্রাইম সিন’ এ জাকারিয়া আলম শিপলু ও তার বাহিনীর জমি জাল দলিল করে বিক্রি, জালিয়াতি, জবরদখল, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, কবরস্থানের জমি বেদখল, মাদকে পৃষ্ঠপোষকতা এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে হলফ নামায় তথ্য গোপন করার বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনের জেরে গত বুধবার (৫ এপ্রিল) ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও জাকারিয়া আলম শিপলু আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপনডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দাখিল করেন। ওই মামলায় নূর মোহাম্মদ এবং শাফিউল ইসলাম শাফি নামের আরও দুইজনকে আসামি করা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় শিপলুর দাবি, উপরোক্ত তিনজন পারস্পরিক যোগসাজশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য ওই প্রতিবেদন করেছে।

আদালত দাখিল হওয়া মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ কিংবা গ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে আদালত।

এদিকে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নান জানিয়েছেন, সুস্পষ্ট নথিপত্র, হয়রানির শিকার এবং ভুক্তভোগী মানুষ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য দিয়ে ক্রাইমসিন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। শিপলু যে মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, সেই তথ্যও প্রতিবেদনে প্রচার করা হয়েছিল। তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে ক্রাইম সিনে প্রচারিত তথ্য সঠিক। তদন্ত করলে অন্যান্য উপস্থাপিত তথ্যসমূহ শতভাগ সঠিক হিসেবে প্রমাণিত হবে। সে কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দাখিল করা মামলা খারিজ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

এটিএম/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply