‘অ্যাওয়ে’র যেসব সুখস্মৃতি রোমন্থনে ফিরতে পারে আর্সেনালের প্রতি বিশ্বাস

|

ছবি: সংগৃহীত

খুব কম মানুষই এখন বিশ্বাস করছে যে, ইতিহাদে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগ জয়ের আশা আজ জোরালো করতে পারবে আর্সেনাল। কিন্তু গানারদের দীর্ঘ ইতিহাসে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে ম্যাচ জয় সাক্ষ্য দেয়, যেকোনো কিছুই সম্ভব!

‘তুমি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চাও, এ ধরনের ম্যাচগুলো জিততে হবে। বিষয় এটাই।’- ম্যান সিটির বিপক্ষে মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে এভাবেই কথা বলেছেন গানারদের ম্যানেজার মিকেল আর্টেটা। ৫ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে ইতিহাদে খেলতে যাচ্ছে আর্সেনাল। তবে ম্যান সিটির হাতে আছে দুইটি বেশি ম্যাচ অর্থাৎ, সম্ভাব্য ৬ পয়েন্টের হাতছানি। শেষ ৩টি ম্যাচে টানা ড্র করায় আর্সেনালের এখন আর নেই ভুল করার বিলাসিতা; যদি গানাররা ২০০৪ সালের পর এই প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জিততে চায়।

পেপ গার্দিওলা তাই যতই বলুন না কেন যে, এই দ্বৈরথ গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিরোপা নির্ণায়ক নয়; ইতিহাদের ম্যাচটির শিরোপা নির্ধারক হয়ে ওঠার মতো সকল রসদই এখন বিদ্যমান। দুই দলের সাম্প্রতিক ফর্ম দেখলে আর্সেনালের দিকে বাজি ধরার মতো মানুষের সংখ্যা এখন খুবই কম হওয়ার কথা। তবে আর্সেনালের অস্ত্রাগারে এমন কিছু ম্যাচের ইতিহাসও আছে যা দেখায়, ফুটবলের ক্ষেত্রে যেকোনো কিছুই সম্ভব। দেখা যাক তেমন কিছু ম্যাচের গতিপ্রকৃতি।

অ্যানফিল্ড, ১৯৮৯

খুব সম্ভবত আর্সেনালের ইতিহাসে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ অ্যাওয়ে জয় ধরা যায় এই ম্যাচকেই। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমের শেষদিনে অ্যানফিল্ডে খেলতে যায় গানাররা। জর্জ গ্রাহামের সেই দলকে লিগ জেতার জন্য লিভারপুলকে হারাতে হতো ২-০ গোলে। নইলে আবারও শিরোপা যাবে লিভারপুলের কাছে। নিজেদের মাঠে ডার্বি কাউন্টির কাছে হার ও উইম্বলডনের কাছে ড্র করে আসা আর্সেনাল সেই ম্যাচেই ছিল আন্ডারডগ। কিন্তু, ইনজুরি টাইমে মাইকেল থমাসের নাটকীয় গোলে ২-০ ব্যবধানেই জয় পায় আর্সেনাল। আর, ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা জয় করে গানাররা।

ওল্ড ট্রাফোর্ড, ২০০২

২০০২ সালের মে’তে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেভারিট হিসেবেই যায় আর্সেনাল। কয়েকদিন আগেই চেলসিকে হারিয়ে এফএ কাপ জয় করা গানাররা জানতো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে তাদের মাঠে হারাতে পারলেই আসবে কাঙ্ক্ষিত ‘ডাবল’। ফ্রেডি লিউংবার্গের শট প্রতিহত হলে সিলভেইন উইলটর্ডের গোলে পূরণ ৩ পয়েন্ট পায় আর্সেন ওয়েঙ্গারের দল। সে সময় ইউনাইটেডের উপর আর্সেনালের আধিপত্যকেই প্রকাশ করে এই অ্যাওয়ে জয়।

হোয়াইট হার্ট লেন, ২০০৪

এই ম্যাচে জয় আসেনি। তবে গানারদের জন্য ছিল দুর্দান্ত এক অ্যাওয়ে ম্যাচ। নিউক্যাসলের কাছে চেলসির পরাজয়ে আর্সেনালের সামনে সমীকরণ দাঁড়ায় যে, স্পার্সদের বিপক্ষে এক পয়েন্ট হলেই প্রিমিয়ার লিগ জয়ের জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে। প্যাট্রিক ভিয়েরা ও রবার্ট পিরেসের গোলে ২ গোলের লিড পেয়ে যায় গানাররা। দুইটি গোল হজম করে শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র করলেও আর্সেন ওয়েঙ্গারের দল তাদের নর্থ লন্ডনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠেই করে শিরোপা উৎসব। আর্সেনালের ফ্যানদের সেই উদযাপন ভুলে যাওয়া কঠিন। একই কথা খাটে টটেনহামের জন্যও!

স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ, ২০০৪

অপরাজিত থেকেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে গিয়েছিল আর্সেন ওয়েঙ্গারের দল। আর্সেনাল জানতো, ওয়েস্ট লন্ডনের এই ম্যাচে তাদের জয় শেষ করে দেবে চেলসির শিরোপা স্বপ্ন। সেই সাথে জোরালো করবে অপরাজিত থেকেই লিগ জয়ের এক সত্যিকার সম্ভাবনা।

তবে ঠিকভাবে ম্যাচটি শুরু করতে পারেনি গানাররা। এক মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যায় চেলসি। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজকে এরপর চুপ করিয়ে দেন প্যাট্রিক ভিয়েরা। তার ইক্যুয়ালিজারের পর এডুর গোলে দুর্দান্ত জয় নিশ্চিত করে গানাররা। ‘ইনভিন্সিবল’ মৌসুমে আর্সেনালের অন্যতম সেরা ম্যাচ ছিল এটি।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যু, ২০০৬

বার্নাব্যুতে এটি ছিল থিয়েরি অঁরির ম্যাচ। চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর ড্র হয়ে যাওয়ার পর খুব কম লোকই রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে আর্সেন ওয়েঙ্গারের তরুণ দলের প্রতি ভরসা রাখতে পেরেছিল। কিন্তু ইউরোপ সেরা হওয়ার আকাঙ্ক্ষার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বার্নাব্যু থেকে ১-০ গোলের ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে নেয় আর্সেনাল। প্রথম কোনো ইংলিশ ক্লাব হিসেবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে জয় পায় গানাররা।

আরও অনেকবারের মতোই, থিয়েরি অঁরি ছিলেন আর্সেনালের জয়ের নায়ক। দ্বিতীয়ার্ধে চোখ ধাঁধানো এক সলো রান থেকে অসাধারণ গোল করে ব্যবধান গড়ে দেন এই গানার কিংবদন্তি।

সান সিরো, ২০০৪

চ্যাম্পিয়নস লিগের আরও একটি জাদুকরি রাত। হাইবুরিতে ইন্টারের কাছে ০-৩ গোলে হেরে যাওয়ার পরের লেগের ম্যাচে জয় দরকার ছিল গানারদের, নইলে গ্রুপ স্টেজেই শেষ হয়ে যেতো তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিযান। আর জয়টাই পেলো আর্সেনাল। সেটাও এলো অবিস্মরণীয় ভঙ্গিমায়!

থিয়েরি অঁরি খোলেন গোলের খাতা। ক্রিশ্চিয়ান ভিয়েরির ডিফ্লেক্টেড শট জালে জড়ালে সমতায় ফেরে ইন্টার। বিরতির পর ফ্রেডি লিউংবার্গের গোলে আবারও লিড নেয় গানাররা। এরপর একে একে গোল করেন অঁরি, এডু এবং রবার্ট পিরেস। আর্সেনালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে অন্যতম সেরা রাত ছিল এই সান সিরোর পারফরমেন্স।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply