সাময়িক বরখাস্ত হলেন রংপুরের আলোচিত কাউন্সিলর শিপলু

|

জাকারিয়া আলম শিপলু।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, রংপুর:

সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমির দলিল জাল করে বিক্রি সংক্রান্ত মামলায় এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তাজহাট মেট্রোপলিটন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আলম শিপলু।

কমিশনার শিপলুকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন।

সোমবার (১৫ মে) তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুর বিরুদ্ধে রংপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত মামলায় দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪২০ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডাদেশ থাকায় স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ এর ১২ ধারার উপ-ধারা ১ অনুযায়ী জাকারিয়া আলমকে স্বীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। এছাড়াও একই আইনের ১৩ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী অপসারণের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জাকারিয়া আলম শিপলু ও তার বাহিনীকে নিয়ে ‘ক্রাইম সিন’ নামক অনুষ্ঠানে ‘জমি দখলের ডন শিপলু বাহিনী, রক্ষা পায়নি কবরস্থান সড়কের জমি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে যমুনা টেলিভিশন।

ওই প্রতিবেদনে জাকারিয়া আলম শিপলুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে বিক্রি সংক্রান্ত মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া, তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্তসহ ৮ মামলার আসামি, সিটি নির্বাচনের হলফনামায় তথ্য গোপন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কবরস্থানের জমি বেদখল, মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতাসহ গড়ে তোলা বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্মের বিষয় তুলে ধরে যমুনা টেলিভিশন।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ এপ্রিল ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাইবার আদালতে যমুনার স্টাফ করেসপনডেন্ট ও রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন শিপলু।

আদালত দাখিল হওয়া মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ কিংবা গ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবে আদালত। ওই মামলায় নূর মোহাম্মদ এবং শাফিউল ইসলাম শাফি নামের আরো দু’জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে নূর মোহাম্মদের কাছেই তিনি এবং তার দুই সহযোগী জহরুল আলম শাহীন এবং খায়রুল ইসলাম রাসেল সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে রেজিস্ট্রি বায়না করেছিলেন। এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। এই মামলায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি শিপলুসহ তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এক বছরের কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ওই মামলায় সাজাবৃদ্ধির জন্য হাইকোর্টে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ। ওই মামলার দণ্ডাদেশের কারণেই জাকারিয়া আলম শিপলুকে সাময়িক বরখাস্ত করলো স্থানীয় সরকার বিভাগ।

যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর পুলিশ অনুসন্ধান করে পায় জাকারিয়া আলম শিপলুর বিরুদ্ধে চারটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। ওই চারটি মামলায় গেলো ৭ এপ্রিল তাকে বিনোদপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় বিভিন্নভাবে গ্রেফতার অভিযান বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালায় তার বাহিনী। এসময় বেশ কিছু যুবকের মুখ গামছা বাধা অবস্থায় ছিল। ৮ এপ্রিল আদালতের বিচারক তিনটি মামলায় জামিন দিলেও জিআর ১৮১/২২ মামলায় জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে মামলার ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়া, ভাঙচুর, মারপিট, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২৪৪/২২ এবং এবং ১৮১/২২ নম্বর মামলা এবং বিদ্যুৎ কোর্টে বিল বকেয়া রাখার কারণে ৪০৫৪/২১ নম্বর মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল। সে কারণে তাকে ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টায় নগরীর বিনোদপুর এলাকার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তিনি একটি মামলার এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ওয়ারেন্টগুলো আগেই আদালত জারি করলেও প্রক্রিয়াগতভাবে ওয়ারেন্টগুলো আমাদের কাছে না থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে আদালত থেকে প্রাপ্ত হওয়ার পরপরই তাকে আইনের আওতায় আনা হয়।

এদিকে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার আবেদনের ঘটনায় ফুঁসে উঠে সাংবাদিক সমাজ। তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি করে আসছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply