নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে ‘অর্থনৈতিক সংকট’; বিশিষ্টজনদের মত

|

আলমগীর স্বপন:

আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে ‘অর্থনৈতিক সংকট’। এক্ষেত্রে সামনে সংকট বাড়লে পশ্চিমা কুটনীতিকদের নির্বাচন সুষ্ঠু করার চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তবে সরকার চাপে থাকলেও কতটা নত হবে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুনের।

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই চলে আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। ডলার-জ্বালানি সংকটের পথ ধরে মুদ্রাস্ফীতি-লাগামহীন দ্রব্যমূল্য ও লোডশেডিং এ ধুঁকছে দেশ। এর মাঝেই মাত্র ৬ মাস পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এবারের নির্বাচনকে ‘একটি চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদিন মালিক বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চলতি অর্থনৈতিক সংকট কতটা মোকাবেলা করতে পারবে, তার উপর নির্ভর করছে তাদের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ। তিনি বলেন, বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করে উপায় নেই। বিশেষত, এই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে। ২০১৪ সালে অর্থনৈতিক সংকট ছিল না, ২০১৮ সালেও না। হ্যাঁ, তখনও বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা নিয়ে একদমই মাথাব্যথা ছিল না, তা নয়। তবে সরকার তখন পানিতে পড়ে যায়নি। কিন্তু সরকারের এখন ওই ডলারের জোর নাই। সেটা ‘১৪ তে ছিল, ‘১৮তেও ছিল। এই সংকট সামাল দিতে পারলে শেখ হাসিনা ১৪ ও ১৮ মডেলের নির্বাচন করে পার হয়ে যাবে। সে জন্য সামাল দিতে পারার মতো ডলার লাগবে।

যদিও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন মনে করেন, অর্থনৈতিক সংকট ও ভিসা নীতি নিয়ে মার্কিন হুমকি থাকলেও নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হবে না। তিনি বলেন, বিদেশি রাষ্ট্র এসে বলে গেলো আর সেটি করা হবে, এমনটি হবে না। সুতরাং, নির্বাচনে যেমনটি হয়, আমেরিকা-তুরস্কে যেমন হয় এখানেও তেমন হবে। কিন্তু ব্যাপক কারচুপি হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ, সরকার বা বিরোধী দল কেউই এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না।

মুনতাসীর মামুনের অভিযোগ, নানাভাবে পশ্চিমারা নির্বাচন নিয়ে খবরদারি করতে চাইছে। এক্ষেত্রে শাহদীন মালিকের মত ভিন্ন। অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাই পশ্চিমাদের এই খবরদারির সুযোগ করে দেয় বলে সুষ্টু নির্বাচন না হলে সংকট আরও বাড়বে বলে মন্তব্য তার। এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, কারচুপির নির্বাচন হলে আমি বলবো না যে, আমরা বিদেশি স্যাংশনে পড়বো। কিন্তু তারা আমাদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবে।

ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, অর্থনীতির ব্যাপারটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। আমাদের মোট রফতানি কোথায় যায়? চীনে তো যাচ্ছে না। ভারতেও যাচ্ছে না। যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়। সুতরাং, তাদের অনেক কথা আমাদের শুনতে হবে। দশটা কথা বললে দুইটা শুনতে হবে। দশটাই শুনতে হবে, তা আমি মনে করি না।

তারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা আপাতত কম। সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেছেন, ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু সমঝোতার কথা তারা এখন বাজারে ছাড়বেন। সেই সাথে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় সংলাপের সম্ভাবনাকে উড়িয়েও দেননি তিনি।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply