ডিএসএ থেকে সিএসএ: যা বলছেন আইনজ্ঞরা

|

প্রতীকী ছবি।

নূরনবী সরকার:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাল্টে হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা আইন। যাতে কমেছে সাজার মাত্রা, বেড়েছে জামিনযোগ্য ধারার সংখ্যা। তারপরও নতুন আইনটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মহল। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন পক্ষ-বিপক্ষের আইনজীবীরা।

দুই আইনের মধ্যে স্বস্তিদায়ক পার্থক্য একটিই। তা হলো- ডিজিটাল মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশে মানহানির মামলায় জেল খাটতে হবে না। কিন্তু জরিমানা দিতে হবে ২৫ লাখ টাকা। একইসাথে নতুন আইনে ৯টি জামিন অযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হলেও, বহাল থাকছে ৬টি ধারা। যাতে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার, তল্লাশি ও মোবাইলসহ ডিজিটাল ডিভাইস জব্দের সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডিএসএ’র ২৯ অনুচ্ছেদের সাজার বিধান তুলে দিয়ে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। একইসাথে মামলা হলেই সাংবাদিককে গ্রেফতার করার বিধান রদ করা হয়েছে। তবে দোষী প্রমাণিত হলে সাংবাদিক বা প্রতিষ্ঠানকে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা তার কম অর্থ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দিতে হবে। আগের আইনের ৯টি অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে নতুন আইনে। জানা যাচ্ছে, সাইবার নিরাপত্তার আইনেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ৬০টির মতো ধারা রাখা হবে।

এসব নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, এটা অনেক পজেটিভ হবে, জামিনযোগ্য হবে। হয়তো দণ্ড থাকবে না, অর্থদণ্ড হতে পারে। আমি এ পর্যন্ত যা দেখলাম, সবগুলোই পজেটিভ মনে হচ্ছে। এখন নতুন আইন হলেও আগের মামলাগুলো যেভাবে আছে, সেভাবেই চলবে। আরও ভেটিং হবে, পরিবর্তন-পরিমার্জন হবে। তবে, এই মুহূর্তে এটিকে আইওয়াশ বলার কোনো অবকাশ নেই।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে সব মামলা সরকার করেনি এমন মন্তব্য করে খুরশীদ আলম খান বলেন, কিছু ইন্ডিভিজুয়ালও তো মামলা করেছে। সরকার নিজে মামলা করে থাকলে তা উথড্রো করতে পারে। কিন্তু বাতিল তো হবে না। উইথড্রাল একটা প্রভিশন আছে, তবে যেহেতু এটা স্পেশাল ল’ ফলে আদৌ এটা উইথড্রোয়াল হবে কিনা সেটাও কোর্টের বিবেচনার বিষয়।

কিন্তু এই নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন সুপ্রিমকোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, নাম পরিবর্তন করে যদি একই বিধান রাখা হয় তবে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হবে না। নাগরিকদের ভোগান্তি কোনোভাবেই কমবে না। কিছু কিছু জায়গায় শাস্তির পরিমাণটা কমানো হচ্ছে, এটি তো অন্য আলাপ। ডিএসএ বাতিলের দাবির পেছনে যে যুক্তি ছিল, যে শঙ্কা ছিল এবং যে উদ্বেগগুলো প্রকাশ করা হয়েছিল, তা এখানে সঠিকভাবে অ্যাড্রেস করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, যতগুলো হয়রানিমূলক মামলা হয়েছিল, যারা এখনো কারাগারে আছেন; তারা যদি একই নিয়মে আটকই থাকেন, তাদের মামলা যদি একই নিয়মে চলতেই থাকে তাহলে তো তারা কোনো রকমের বেনিফিট পেল না। আমরা এখনো ড্রাফটই দেখলাম না, অথচ এই তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনারা পুরো বিলটা রেডি করে সংসদে উপস্থাপন করবেন। সেক্ষেত্রে তো জনগণের বা অংশীজনের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগই থাকলো না।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে ৬টি ধারা অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ছিল। এই ধারাগুলোতে মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার হলে জামিন পাবেন না সন্দেহভাজন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা একইভাবে রাখা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনে। সেই ধারায় বলা আছে বিনা ওয়ারেন্টে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইচ্ছে করলেই পুলিশ এ আইন বলে তল্লাশি করতে পারবে। প্রয়োজনীয় ডিভাইস জব্দ করতে পারবে। তাই আইনটির অপপ্রয়োগ বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রসঙ্গত, সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়াটি মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত করেছে। এখন আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হবে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে আইনটি পাশের জন্য সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করা হবে।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply