ক্ষুধা নিবারণে পাতা সিদ্ধ করে খাচ্ছেন ইয়েমেনের মানুষ!

|

উত্তর ইয়েমেনের একটি জেলার নাম আসলাম। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির প্রত্যন্ত এই এলাকায় মানুষজন ক্ষুধা নিবারণের জন্য কিছু পাচ্ছেন না। তাই লতাপাতা সিদ্ধ করে বানানো ঝোল খেয়ে জীবন ধারণের চেষ্টা করছেন তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এপি একটি ছবি প্রকাশ করেছে। যাতে দেখা যাচ্ছে, হাজ্জাজ প্রদেশের জেলা আসলামে একটি পরিবার কিছু পাতা সংগ্রহ করে সিদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত করছে। তাদের পাশে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে ক্ষীণকায় কয়েকটি শিশু। ছবিটি গত ২৫ আগস্ট তোলা বলে জানানো হয়েছে।

এপির প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, এরকম অবস্থা স্থানীয় অনেকের। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের অব্যাহত হামলা এবং ইরানের মদদপুষ্ট হুথি বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের কারণে আসলামের মতো ইয়েমেনে বহু এলাকায় আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাগুলো ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না। আবার এত বিপুল পরিমাণ ত্রাণের চাহিদা মেটাতে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো হিমশিম খাচ্ছে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সিদ্ধান্তে ইয়েমেনে হুথিদের দুর্বল করে সৌদি আরবের পছন্দের সরকার বসাতে ২০১৫ সালে হামলা শুরু করা হয়। কিন্তু গত তিন বছরে কোনো সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি সৌদি সরকার।

তবে তিন বছরের যুদ্ধে ধ্বংস হতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ইয়েমেন। প্রায় তিন কোটি জনসংখ্যার বেশিরভাগই এখন যুদ্ধের সরাসরি ভুক্তভোগী। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২ কোটি মানুষ প্রতিদিন প্রয়োজনীয় খাবার পাচ্ছেন না। চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ায় জরুরি সেবা থেকেও বঞ্চিত আছেন দেশটির বেশিরভাগ মানুষ।

এপির ফটোগ্রাফার কথা বলেন আসলাম অঞ্চলের এক নারীর সাথে। জাহরা নামে ৭ মাসের একটি সন্তানকে নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে বসেছিলেন তিনি। জাহরা নামে ৭ মাসের একটি সন্তানকে পাশে নিয়ে নিজের বাড়ির সামনে বসেছিলেন তিনি।

এক পর্যায়ে জাহরা তার কঙ্কালসার শরীর নিয়ে কেঁদে ওঠলো ক্ষুধার যন্ত্রণায়। মা তাকে কোলে নিলেন, কিন্তু বুকের দুধ খাওয়ানোর মতো অবস্থায় নেই মা। অপুষ্টিতে তার শরীরও হাড্ডিসার।

এপির সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘ওর জন্মের পর থেকে ওকে দুধ বা ওষুধ কিনে খাওয়ানোর মতো টাকা কখনো আমার কাছে ছিল না।’

জাহরাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে একটা ক্লিনিক আছে। সেখানে বিদেশি সংস্থাগুলোর দেয়া চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন স্থানীয়রা, যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। কিন্তু বাড়ি থেকে ক্লিনিকের যে দূরত্ব তাতে নিজেদের দুর্বল শরীর নিয়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয় জাহরার বাবা-মায়ের পক্ষে।

অনেক কষ্টে সম্প্রতি মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে পেরেছিলেন। কিন্তু এরপর আবারও যেতে পারবেন কিনা ঠিক নেই। কারণ ওখানে যাতায়াতের জন্য যে ভাড়া প্রয়োজন তা জোগাড় করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ওই ক্লিনিকের প্রধান হলেন মাক্কিয়া মাহদি।

তিনি জানালেন, ক’দিন আগে জাহরাকে নিয়ে এসেছিলেন বাবা-মা। কিন্তু শুনেছেন আবারও তার শরীরের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে। যদি আবারও তাকে হাসপাতালে না আনা যায় তাহলে মেয়েটি মারা যাবে, বললেন মাক্কিয়া।

সম্প্রতি চিকিৎসা দিতেই আসলাম জেলার গ্রামগুলোতে গিয়েছিলেন মাক্কিয়া। জানালেন, ওখানে তিনি নিজ চোখে দেখে এসেছেন লোকজন গাছের পাতা সিদ্ধ করে সন্তানদের নিয়ে খাচ্ছে। “বাড়ি ফিরে আমি মুখে খাবার তুলতে পারিনি”, বললেন এই স্বাস্থ্যকর্মী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply