মেগা প্রকল্পে বালাই নেই নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের, মানা হচ্ছে না জাতীয় বিল্ডিং কোডও

|

আল-আমিন হক অহন, ঢাকা:

দেশের হাজার-হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পগুলো নির্মাণে নেই নিরাপত্তার বালাই। এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বিআরটি’র মতো বিশাল প্রকল্পে মানতে হয় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। অথচ সেখানে অধিকাংশ সময় মানা হচ্ছে না দেশের ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডই।

নিরাপত্তার জন্য আলাদা করে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের টাকা থাকলেও সেটির কি হচ্ছে তা জানে না কেউ। তাই, গত বৃহস্পতিবার এক্সপ্রেসওয়ের কাজে নিয়োজিত ক্রেনের ধাক্কায় ট্রেন দুর্ঘটনার পর ফের প্রশ্ন উঠেছে, মেগা প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কবে।

সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজারে দেখা যায়, চারুলতা মার্কেটের পাশে চলছে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ। ক্রেনে নামানো হচ্ছে ভারী ভারী পাত। লিভারে তোলা হচ্ছে নানান ধরণের যন্ত্রপাতি। এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সময় নিচ দিয়ে চলছে শতশত মানুষ ও যানবাহন।

তবে নিরাপত্তাহীনভাবে চলছে এসব নির্মাণ কাজ। নিয়মানুযায়ী এখানে রেলের দুই লাইনম্যান ছাড়াও আলাদা করে থাকার কথা এক্সপ্রেসওয়ের অন্তত ৩ জন। যাদের মধ্যে দুজন সাধারণ মানুষ ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্বে থাকার কথা। আর মাইক হাতে থাকার কথা আরও একজনার, যিনি সতর্ক করবেন সবাইকে। কিন্তু এমন কাউকেউ খুঁজে পাননি প্রতিবেদক।

এমন অনিয়মের ছবি নিতে গেলেই ক্যামেরাম্যানের দিকে ছুটে এসে বাধা দেন এক্সপ্রেসওয়ের কাজে নিয়োজিতরা। প্রশ্ন করেন, কেন নিচ্ছেন ছবি? নিরাপত্তাহীনভাবে কাজ চলছে তাই ছবি নেয়া হচ্ছে জানিয়ে নিরাপত্তা মানছেন না কীজন্য, এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা প্রতিবেদককে বলেন, আপনি বোঝেন না সেটা? এখানে ছবি তোলা ও ভিডিও করা পুরোপুরি বন্ধ।

তবে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে বেড়ে যায় নিরাপত্তা। চার পাঁচজনের জনবল বেড়ে হয়ে যায় ১৫ জন। এ সময় মাইক হাতেও দাঁড়িয়ে যান একজন।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সেখানের ৩২ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেলপথসংলগ্ন এলাকা ব্যবহার করা হচ্ছে। মোটামুটি সবখানেই একই চিত্র। কোথাও দেখা মেলেনি যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থার।

রাজধানীর পূর্ব নাখালপাড়ায়ও দেখা যায় একই অবস্থা। গত বৃহস্পতিবার এখানেই ক্রেনের আঘাতে লাইনচ্যুত হয়েছিলো কমিউটার ট্রেনের দুটি বগি। কিন্তু তারপরেও নির্বিকার সবাই। দেয়া হচ্ছে না পর্যাপ্ত জননিরাপত্তা। এখানেও ক্যামেরা দেখেই তেড়ে আসেন প্রকল্পের কর্মীরা। বাধা দিয়ে বলেন, ছবি নেয়া যাবে না।

এসব বিষয়ে দুর্ঘটনা গবেষকরা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা তদারককারী কর্মকর্তাদের উদাসীনতার ফলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা।

যোগাযোগ ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, নিরাপত্তাই প্রথম। পুরো পৃথিবীতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই মূলমন্ত্র মানা হয়। বিশেষ করে চলমান রাস্তা সংলগ্ন জায়গায় যখন কাজ চলে তখন যারা যাতায়াত করেন তাদের জন্য নিরাপত্তা স্তর দ্বিগুণ থেকে তিনগুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু এসব জায়গায় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে লেশমাত্র মানা হয়না, ফলে ঘটে দুর্ঘটনা।

এর আগে মেট্রোরেলের নির্মাণেও মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের। আর গত বছর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার চাপায় ৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনা তো সবারই জানা।

তারপরেও এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এর আগে দুর্ঘটনা ঘটার সময়ে দায়িত্ব থাকা গেজুবাকে আমরা আর কোনও কাজ দেইনি। এখন তারা যেসব কাজ করছে সেগুলো আগে পাওয়া। এসব ক্ষেত্রে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেই। এছাড়া আদালত কোন সিদ্ধান্ত দিলে সেই আদেশও তারা মানবেন বলে জানান।

/এমএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply