প্রজনন স্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রয়োজন আইনি নীতিমালা

|

ছবি: প্রতিকী

মহিউদ্দিন মধু

প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে কেনো সামাজিক জড়তা কাটেনি পুরোপুরি? তাই আমরা একটু সরেজমিনের পরিস্থিতি দেখার চেষ্টা করি। একারণে রাজধানীর কয়েকটি কম সুবিধার এলাকা, পাশাপাশি তুলনামূলক ভালো পরিবেশের বসবাসরত কিশোর-কিশোরীদের সাথে কথা বলি।

কম সুবিধার এলাকা হিসেবে, কড়াইল ও শাহজাহানপুর বস্তিতে যাই। কথা বলি ৮টি  ঘরের ১১ জন কিশোর-কিশোরীর সাথে। কথা প্রসঙ্গে তাদের বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে কথা উঠতেই লজ্জা আর জড়তা এসে ভর করলো প্রত্যেকের চোখে মুখে। জানতে চাই, বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তন নিয়ে তারা কি জানে? এই যে তাদের লজ্জা আর জড়তা, তাতেই আমাদের কাছে বস্তির বাকিদের বিষয়টাও অনুমেয়।

এরপর, মিরপুরের পাইকপাড়া ও বাইশটেকি এলাকায় যাই। সেখানে ৬ জন কিশোর-কিশোরীর বক্তব্য কিছুটা ভিন্ন। তারা অনেকটাই সহজে উত্তর দিচ্ছেন। এমনকি এক কিশোরের কাছে পুরো বয়ঃসন্ধি নিয়ে পরিস্কার ধারণা। আরেকটু স্পষ্ট ধারণা নিতে যাই, বনানী ও গুলশানে। কথা বলি আরও ৫ জনের সাথে। এখানে পরিস্থিতি আরেকটু ভালো, অনুমেয়। তাদের কাছে বিষয়টা লজ্জা কিংবা ট্যাবু বলে কিছু নয়। স্বস্তস্ফূর্তভাবেই আলোচনায় অংশ নিয়ে জানালেন, এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়; স্বাস্থ্যগত পরিক্রমা।  

সরেজমিনের এই ধারণা থেকে আমাদের প্রাথমিক ভাবনাটা স্পষ্ট। তা হচ্ছে- এলাকা, পরিবেশ ও শিক্ষার প্রভাব মোতাবেক বিষয়টার বিস্তার এবং প্রভাব আলাদা। বুঝাই যাচ্ছে, পুরো দেশের জেলা পর্যায়ের যারা শহরে বাস করে তাদের মাঝে কিছুটা ধারণা থাকলেও প্রান্তিক পর্যায়ে একেবারেই ন্যুহ। এই বয়সী বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরী পরিষ্কার ভাবে জানে না তাদের প্রজনন অঙ্গ সম্পর্কে, আর সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাদের ধারনা যে নেই সেটা বলা বাহুল্য।

এই যখন সামগ্রিক পরিস্থিতি, তখন আমাদের ভাবনায় আসে একটি কেস স্টাডি। নারীর সুস্বাস্থ্যে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুরক্ষায় অপ্রয়োজনীয় সিজার বন্ধে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। যা কিনা নারীর ক্ষমতায়নেও ভুমিকা রাখবে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন বিচারপতি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা জানতে চাই, রায়ের পরবর্তী সময় অর্থাৎ গত ১১ অক্টোবর থেকে এই দুই মাসে অপ্রয়োজনীয় সিজার কতটা কমেছে?

এরকম নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গাইনোকোলোজিস্ট জানান, প্রতি মাসে অন্তন্ত ২০টি সিজার করাতেন তিনি। গত দুই মাসে সব মিলিয়ে তিনি সিজার করিয়েছেন ১৪টি। হাইকোর্টের রায় কিংবা নীতিমালার প্রভাব কিনা? এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও সহজেই বিষয়টি অনুমেয়।

অর্থাৎ হাইকোর্টের রায় এখানে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে বোধকরি। সেই লক্ষ্যে আমরা হাইকোর্টের বিভিন্ন রায় ও জনস্বার্থে করা রিটগুলোর তথ্য অনুসন্ধান করি। সেখানে জনস্বাস্থের কিছু বিষয় থাকলেও প্রজনন স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলাদা করে কোনো রিট কিংবা রায় নেই। এমতাবস্থায় কথা বলি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিনের সাথে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন। ছবি: ফাইল

সাবরিনা জেরিন আমাদের জানান, প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই একটি নীতিমালা আদালত থেকে অনুমিত থাকা দরকার। যাতে করে সমাজের ট্যাবু ভেঙ্গে নীতিমালার আলোকে সর্বস্তরে বিষয়টি খোলামেলা আলাপ দরকার। কিংবা হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিটের রায়কে ধরে সমাজে বিস্তরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া যায়। অর্থাৎ, যদি উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা থাকে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে, তাহলে সভা, সেমিনার ও গোল টেবিল আলাপসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেয়া যেতে পারে। আপাতত পর্যায়ে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টাও প্রসংশনীয়, তবে সেটিকে আরও বিস্তর করার ক্ষেত্রে আইনি কাঠামো অন্যতম একটি পাথেয় হবে বলে, যোগ করেন ব্যারিস্টার সাবরিনা জেরিন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply