ড. ইউনূসের রায়ে ঘটলো যেসব নজিরবিহীন ঘটনা

|

মহিউদ্দিন মধু:

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সোমবার (১ জানুয়ারি) গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন শ্রম আদালত। রায়ে বলা হয়েছে, ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের ৩ শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

তবে বহুল আলোচিত ড. ইউনূসের এই মামলার রায়ে একাধিক নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে।

আজ দুপুরে শ্রম আদালতের বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা এই রায় ঘোষণা করেন। রায় চলাকালীনই ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন প্রায় ৩ বার দাঁড়িয়ে বিচারকের সাথে বাদানুবাদে জড়ান। যা বাংলাদেশের শ্রম আদালতের ইতিহাসে নজিরবিহীন। রায় ঘোষণার সময় একাধিকবার উঠে দাঁড়িয়ে আইনজীবী বলেন, তিনি যে ‘টু দ্য পয়েন্টে’ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন, সেগুলো রায়ে আসেনি। এ সময় পুরো রায় ঘোষণার পর সব জানতে পারবেন বলে জানান বিচারক। তবে তা মানতে চাননি ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।

শ্রম আদালতের এই রায়ে আরও একটি নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। এ আদালতে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলোতে রায় মালিকপক্ষের বিপক্ষে গেছে, এমন নজির পাওয়া যায়নি। কিন্তু ড. ইউনূসের ক্ষেত্রে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, ড. ইউনূসের এই মামলা গোটা বিশ্বজুড়েই আলোচিত। রায় ঘোষণার সময় এজলাসে অন্তত ১৫-১৬ জন মানবাধিকারকর্মী ছিলেন; ছিলেন ২-৩ জন বিদেশি নাগরিকও। এজলাসের বাইরেও ড. ইউনূসের পক্ষে অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তাদের কারও কারও হাতে ছিল নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের সমর্থনে প্ল্যাকার্ড। ড. ইউনূসের পক্ষে সেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও।

এই মামলাটি এতটাই আলোচিত যে, দেশ ও বিদেশে ড. ইউনূসের পক্ষে-বিপক্ষে একাধিক বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেমন বিবৃতি দিয়েছে, বিবৃতি দিয়েছে জাতিসংঘও।

এই মামলার রায় ঘোষণাও বেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলেছে। শুরুতে মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রথমে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন ড. ইউনূস। পরবর্তীতে তা চলতে বাধা নেই বলে রায় আসার পর শ্রম আদালতে ১৩ দিন যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন হয়েছে। এত লম্বা সময় ধরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের নজির শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় বাংলাদেশে দেখা যায়নি।

রায়ে ড. ইউনূসসহ ৪ জনকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দুটি ধারায় মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অবশ্য এ সময় ড. ইউনূস আপিল শর্তে জামিন চাইলে আদালত তাকে ১ মাসের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। ৫ হাজার টাকার বন্ডে সেটি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

রায় শেষে সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেন, যে দোষ আমরা করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম। এটা আমার কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল। আমরা সেটা গ্রহণ করলাম। তবে আমাদের মনে দুঃখটা রয়ে গেল। আজ আনন্দের দিনে আমরা আঘাত পেলাম।

ন্যায় বিচার পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটিকে ন্যায়বিচার যদি বলতে চান বলেন। আপনার ইচ্ছা।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply