মসজিদ-মাদরাসার নাম ভাঙিয়ে জমি দখল করছে প্রভাবশালীরা

|

আল-আমিন হক অহন:

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জায়গা দখল করে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে সরকারি সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও জড়িয়ে পড়েছেন। কেউ মসজিদ-মাদরাসার নাম করে আবার কেউ মামলার ভয় দেখিয়ে অন্যের সম্পদ কব্জায় নিচ্ছেন।

বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের সবশেষ অডিটে বলা হয়, গৃহায়ণে সম্পদ বেদখলসহ নানা খাতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম আছে। কোন কৌশলে কোটি কোটি টাকার এসব সম্পদ বেহাত হয়ে যায়? এ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে যমুনা টেলিভিশন।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১’র আওতায় রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ১০ হাজার ৮৮৯ বিঘা জমি রয়েছে। তবে বাস্তবে ৭০ বিঘার নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বাকি জমির পুরোটাই বেদখল রয়েছে। এছাড়া, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের রিপোর্টের বলা হয়, বেদখল জমির মূল্য ৫৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া, রাজধানীর মোহাম্মদপুরেও বেদখল হয়েছে গৃহায়ণের জমি।

মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বায়তুস সালাম জামে মসজিদ ও মাদরাসা ৪২ কাঠার ওপর গড়ে উঠেছে। এতে মসজিদ কমপ্লেক্স ছাড়াও রয়েছে দোকানপাট। তবে এই পুরো জমি মসজিদের নামে নয়। এছাড়া দোকানগুলোতে কত টাকা ভাড়া উঠছে এবং মসজিদের কোষাগারে কত টাকা ঢুকছে, তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। অভিযোগ রয়েছে, টাকা ঢুকছে বিতর্কিত কমিটির পকেটেই।

এরপরও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের পাশের একটি প্লট দখল করেছে মসজিদ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এমনকি মানা হয়নি আদালতের নির্দেশও। প্লটটিতে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য জায়গাটি পুরোপুরি দখল করা। স্থানীয় একজন জানায়, এখানে মসজিদটির ক্যাশিয়ার সাবেক গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কাইয়ুমের প্রভাব রয়েছে।

এদিকে গত কয়েক বছর ধরে মসজিদ কমিটির সভাপতি হিসেবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও ক্যাশিয়ার হিসেবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ূম দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুজনের দিকেই অভিযোগের তীর। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।

মুঠোফোনে আব্দুল কাইয়ূম জানান, কারা বহুতল ভবন নির্মাণ করছে, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তবে তার ধারণা, ইমাম সাহেব এটি করে থাকতে পারে। এছাড়া, এ ভবন নির্মাণে তিনি কোনো টাকা দেননি বলেও জানান।

তাহলে প্রশ্ন হলো, কীভাবে এত বড় ইমারতের নির্মাণ কাজ চলছে? এ বিষয়ে মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জিন ও সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।

উত্তরে মাদরাসারই এক শিক্ষক জানান, ইমারত নির্মাণের বিষয়ে সব কিছুই তারা (অভিযুক্তরা) করছে। আর এখন সাংবাদিকের কাছে অস্বীকার করছে। অভিযুক্তদের আমলেই এই মসজিদ এবং পাশের প্লটটিতে কাজ শুরু হয় বলেও জানান তিনি।

এদিকে, গত এক বছর ধরে জমিটির ওপর নজর রাখে যমুনা টেলিভিশন। বিষয়টি তখন মসজিদ কমিটির নজরেও আনা হয়েছিল। তখন টেলিফোনে দখলের কৌশল হিসেবে মামলা দায়েরের কথা বলেছিলেন কোষাধ্যক্ষ। মুঠোফোনে আব্দুল কাইয়ূম বলেন, যখনই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নোটিশ দেবে, ঠিক তার পরদিনই হাইকোর্টে যাবেন। এরইমধ্যে মামলা লিখে রেখেছেন বলেও জানান। এ কথা বলার কিছুদিন পরই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও প্লট গ্রহিতার নামে একটি মামলাও দায়ের করা হয়।

মুঠোফোনে কাইয়ূম আরও জানান, তার পরিকল্পনা হলো, জায়গা খালি রাখা যাবে না। খালি রাখা হলে তা আবার বেদখল হয়ে যাবে। এরপরই প্লটটিতে দ্রুত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। যেটির আভাস মিলেছিল কাইয়ূমের কথোপকথনে।

ঘটনা এখানেই থেমে ছিল না। ভবন নির্মাণের সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করে মসজিদ কমিটি। যেখানে প্লটটির বরাদ্দ বাতিল করে তা মসজিদের নামে দিতে বলা হয়। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, যে জায়গাটি মসজিদের নয়।

তবে, এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির কেউই কথা বলেতে রাজি হয়নি। মসজিদ কমিটিকে প্লটটির একটি মামলায় নথি উপস্থাপনের জন্য আদালতে ডাকা হয়েছিল। সেখানে চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নানা সিন্ডিকেটের কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এরইমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। দ্রুতই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে বলেও জানান তিনি।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী জানান, মসজিদ-মাদরাসার নামে জমি দখল একটি পুরনো কৌশল। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে এগুলো করা হয়। তবে, এমন কিছু আর হতে দেবেন না বলেও জানান তিনি।

/আরএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply